চিত্রা নদীর জায়গায় পৌরসভা ভবন, বাঁধের কাজ শুরু
![]() |
| নদীর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে বাঘারপাড়া পৌরসভার সীমানাপ্রাচীর। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাঘারপাড়া পৌরসভা নদীর জায়গা দখল করে পৌরসভা ভবন নির্মাণ করেছে। বর্তমানে ভবনের এক পাশে নদীর মধ্যে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজটি করছে যশোরের বাঘারপাড়া পৌরসভা।
ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ অনুযায়ী, নদীর দুই ধারের যে অংশ শুষ্ক মৌসুমে চর পড়ে এবং বর্ষায় ডুবে যায়, তা নদীতট বা ফোরশোর হিসেবে গণ্য হয়। এই জায়গায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা করার অধিকার নেই। কেউ দখল করলে তাকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরা হয়। তবে এই আইন মানেনি বাঘারপাড়া পৌরসভা।
২০২০ সালের ৩০ জুলাই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রকাশিত নদী দখলদারদের তালিকায় চিত্রা নদীর ব্যাপক দখলের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বাঘারপাড়া এলাকায় নদীর জায়গায় পৌরসভার শৌচাগার, দলীয় কার্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, পুকুর, দোকানপাট ও বসতবাড়ি গড়ে তোলার বিষয় দেখানো হয়েছে। আংশিক তালিকায় ৪১ জন দখলদারের নাম থাকলেও পূর্ণাঙ্গ তালিকায় ১২৬ জন অবৈধ দখলদার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব এবং পৌরসভার প্রশাসক মাহির দায়ান আমিন বলেন, ‘গত অর্থবছরে পৌরসভার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আমি সম্প্রতি বদলি হয়ে এসেছি, বিষয়টি জানতাম না। খোঁজ নিচ্ছি।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় সূত্র জানায়, বাঘারপাড়া মৌজায় চিত্রা নদীর দাগ নম্বর ১৭৩৩। ২০০২ সালের ৩০ অক্টোবর বাঘারপাড়া পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয় ছিল বর্তমানে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে। ২০১১ সালে চিত্রা নদীর জায়গা দখল করে পৌরসভা ভবন নির্মাণ করা হয়।
উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসা চিত্রা নদী হঠাৎ বাঁক নিয়ে পশ্চিমমুখী হয়েছে—এ জায়গাটিই বাঘারপাড়া। নদীর উত্তর পাশে বাঘারপাড়া থানা, দক্ষিণ পাশে পৌরসভা, তার পাশে উপজেলা পরিষদ। গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, পৌরসভা ভবনের পশ্চিম পাশে নদীর ভেতর দক্ষিণ থেকে উত্তর এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী সীমানাপ্রাচীরের নির্মাণকাজ চলছে। নিচে লোহার রড বেঁধে কংক্রিট ঢালাই করা হয়েছে। কয়েক ফুট অন্তর উঁচু করে বাঁধাই করা রড রাখা হয়েছে।
পৌরসভা সূত্র জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় কাজটি করা হচ্ছে। বরাদ্দ ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সীমানাপ্রাচীরের দৈর্ঘ্য ১১৫ ফুট, উচ্চতা ৮ ফুট। কাজ করছে যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজ। গত ১ আগস্ট কাজ শুরু হয়েছে, ১২০ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।
মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, ‘এক মাস আগে কাজ শুরু করেছি। মাঝে কয়েক দিন কাজ বন্ধ ছিল, আবার শুরু করেছি। আশা করছি দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে পারব।’
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ভুপালী সরকার ছুটিতে থাকায় তাঁর মতামত জানা যায়নি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘নদীর জায়গায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে চিত্রা নদীর ৩৮.৫ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ধলগ্রাম থেকে দাইতলা অংশ পুনঃখনন পরিকল্পনাধীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন