[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস: তদন্ত কমিশন

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বিডিআর বিদ্রোহে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ তদন্তের জন্য গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় | ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

পিলখানায় সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ তদন্তের জন্য গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন রোববার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত কমিশন বলেছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে দলগতভাবে জড়িত আওয়ামী লীগ। আর মূল সমন্বয়কারী ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।

কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান এবং অন্য সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি তুলে দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণমাধ্যমকে এসব জানায়।

কমিশনের প্রধান ফজলুর রহমান বলেন, তদন্ত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভুলবিহীন রাখতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব অনুসরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কাজ শুরু করি, তখন ১৬ বছর আগের এই ঘটনার অনেক প্রমাণই নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিদেশে চলে গেছেন। আমরা দুইভাবে কাজ করেছি। সাক্ষীদের ডেকেছি, কেউ কেউ আট ঘণ্টা ধরে বক্তব্য দিয়েছেন। যতক্ষণ যাঁরা বলতে চেয়েছেন, শুনেছি। যাঁরা তদন্তে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের রিপোর্ট নিয়েছি, অন্য তথ্যও সংগ্রহ করেছি।’

ফজলুর রহমান বলেন, এই তদন্তে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনমনে থাকা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। বের করা হয়েছে, কার ভূমিকা কী ছিল। কেন সেনাবাহিনী পাশে থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, সেটিও খতিয়ে দেখা হয়েছে।

কমিশন প্রধান বলেন, তদন্তে দেখা গেছে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে বহিঃশক্তির সম্পৃক্ততা ছিল সরাসরি। পাশাপাশি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ মিলেছে জোরালোভাবে।

এসময় তদন্তে কী পাওয়া গেছে তা তুলে ধরে কমিশনের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, কমিশন ঘটনার কিছু বাইরের ও ভেতরের কারণ চিহ্নিত করেছে। এই হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত এবং এর প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বাঁচাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সরাসরি ভূমিকা নেয়। তারা ২০-২৫ জনের একটি মিছিল নিয়ে পিলখানায় ঢোকে এবং বের হওয়ার সময় সেই মিছিলে মানুষের সংখ্যা দুই শতাধিক হয়ে যায়।

জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, পুরো ঘটনাটি ঘটানোর ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল। দায়ের জায়গা নির্ধারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, দায় তৎকালীন সরকারপ্রধান থেকে সেনাপ্রধান পর্যন্ত। ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুলিশ ও র‍্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও ছিল বড় ব্যর্থতা।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং কয়েকজন সাংবাদিকের কাজ ছিল অপেশাদার। হত্যাকাণ্ডের সময় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন) যেসব বিডিআর সদস্যের সঙ্গে শেখ হাসিনা বৈঠক করেন, তাঁদের আসল নাম–পরিচয় ও তথ্য রাখা হয়নি।

কমিশন প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে, যাতে ভবিষ্যতে বাহিনীগুলোয় এমন ঘটনা ঠেকানো যায় এবং ভুক্তভোগীরা পান ন্যায়বিচার।

এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জাতি দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে ছিল। আপনারা সত্য খুঁজে বের করতে যে ভূমিকা রেখেছেন, জাতি মনে রাখবে। জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ইতিহাসের এই ভয়াবহ ঘটনার বিষয়ে জাতির অনেক প্রশ্ন ছিল। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সেসব প্রশ্নের জবাব মিলবে। এতে এসেছে অনেক শিক্ষণীয় দিক। জাতির জন্য এটি হয়ে থাকবে মূল্যবান দলিল।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হামলায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। ওই হত্যা ঘটে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র দুই মাস পর।

মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সদস্যরা হলেন মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতীক (অব.), মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ এবং স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন