লুটপাটকারীদের শাস্তি হোক, বন্ধ কারখানাগুলো চালু থাকুক: ফখরুল
বিএনপি সব সময় অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে অর্থনীতিকে। তখন অর্থনীতি সবচেয়ে সচল থেকেছে।
শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে চতুর্থ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ২০২৫-এ তিনি এ কথা বলেন। এই সম্মেলনের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে চিন্তাভাবনাটা পরিবর্তন করা দরকার। গত ১৫ বছর যাঁরা লুট করেছেন, চুরি করেছেন, ব্যাংক ডাকাতি করেছেন, তাঁদের ধরতে হবে, শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু তাঁদের শিল্পকারখানায় হাজার হাজার মানুষ কাজ করে। সেগুলো বন্ধ করে দিয়ে ১৪ লাখ মানুষকে বেকার বানানো হয়েছে। এই লোকগুলো এখন কোথায় যাবে? এই বেকারত্ব আমরা কেন সৃষ্টি করছি? আমি মনে করি, বিষয়টা আমাদের আবার ভেবে দেখা উচিত। এই কারখানাগুলো কীভাবে চালু করা যায়, এই প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, সেটা আমাদের দেখা দরকার।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজ আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি সাধারণ মানুষের ভালো থাকার ওপর। আমাদের কৃষকরা যেন ভালো থাকে, তাদের সমস্যার সমাধান হয়, আমাদের শ্রমিকরা যেন তাদের শ্রমের ন্যায্যমূল্য পায় এবং অর্থনীতিতে যেন স্থিতিশীলতা থাকে।'
কৃষকদের ঠিকমতো সার-বীজ পৌঁছাতে পারলে আরও বেশি সাফল্য পাওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, 'আপনারা খেয়াল করে দেখুন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি; তখন খাদ্যঘাটতি ছিল ২৮ লাখ মেট্রিক টন। সেই বাংলাদেশ এখন প্রায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই খাতে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি।'
মানুষের জীবনমান উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতে কাজ করা দরকার এবং শিক্ষা খাতকে আমূল পরিবর্তন করে জনগণের উন্নয়নের উপযোগী করতে হবে বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা।
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংস্কারের অনেক প্রস্তাব বিএনপি অনেক আগেই দিয়েছে। তিনি বলেন, '২০১৬ সালে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ৩০ দিয়েছিলেন। আজ আমরা যে বিষয়গুলোতে একমত হয়েছি, তার অনেকগুলো সেখানে ছিল। একই সঙ্গে ২০২৩ সালে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। যার মধ্যে আজকের অর্থনৈতিক সংস্কার, রাজনৈতিক সংস্কার—প্রায় সব বিষয়ই এখানে রয়েছে। সামগ্রিকভাবে আমরা বাংলাদেশকে সব সময়ই একটি নতুন বাংলাদেশই শুধু নয়, একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবেই দেখতে চেয়েছি।'
সম্মেলনের মুক্ত আলোচনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, ব্যাংকের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, অর্থনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনেরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
নিজের মতামত তুলে ধরে ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন রহমান বলেন, 'আমরা বিএনপির ইশতেহার শুনলাম। সবকিছু খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।' তিনি আরও বলেন, 'অর্থনীতিতে এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে নিঃসন্দেহে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। তবে দুই বছর আগে টাকার যে অবমূল্যায়ন হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও তা বলেছেন। ব্যাংকঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে এখন তেমন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে না।' সবমিলিয়ে বাংলাদেশ ও অর্থনীতি নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Comments
Comments