[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাজশাহীতে আকস্মিক বৃষ্টি, ফসলের ক্ষতি ১০ কোটি টাকার বেশি

প্রকাশঃ
অ+ অ-
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বৃষ্টির ছয় দিন পরেও নুয়ে পড়া ধানখেতে জমে আছে পানি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই ধান দেখাচ্ছেন উপজেলার প্রসাদপাড়া গ্রামের চাষি মোহাম্মদ রানা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ভালো দাম পাবার আশা নিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রসাদপাড়া গ্রামের চাষি অনীক খান আগাম আলু লাগিয়েছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবার এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিক বন্যা হয়। বন্যার পানিতে অনীকের খেতের সব আলুবীজ পচে যায়। অনীক বলেন, ‘বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সর্বনাশ হয়ে গেছে।’ শুধু আলুই নয়, উঠতি আমন ধান ও অন্যান্য সবজিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, অসময়ের বৃষ্টিতে রাজশাহীর ৩০৮.৬৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি ২৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এতে ৪ হাজার ২০০ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পান বরজে। ৪.৮৩০ হেক্টর জমির পান বরজে ক্ষতির মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। দ্বিতীয় স্থানে আছে আগাম সরিষা। ১৬৬.৩০ হেক্টর জমির সরিষায় ক্ষতির মূল্য ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। পেঁয়াজে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ধানের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

ঘূর্ণিঝড় মোন্থারের প্রভাবে শুক্রবার রাতভর রাজশাহীতে ভারী বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি পরদিন শনিবারও হয়। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, গোদাগাড়ীতে শুক্রবার রাতে ১৬২ মিলিমিটার এবং শনিবার ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তানোরে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

গোদাগাড়ীর প্রসাদপাড়া গ্রামের চাষি আশিক আল মাহমুদ বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পটল ছিল। সেই জমির ওপর দিয়ে বন্যা হয়েছে। পানি দুই দিন থাকার পরও পটলের গাছ মরে যাচ্ছে।’ আরেক কৃষক মো. রানা বলেন, ধানের জমির ওপর দুই দিন ধরে স্রোত গেছে। তার ওপর পলিও পড়েছে। তাই ধানের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যাবে।

পবা উপজেলার শিয়ালবেড় গ্রামের কৃষক রাব্বানী মণ্ডল তার মুলাখেত দেখিয়ে বলেন, ‘দেখেন ভাই, এই যে জমি। এখন শুধু পানি আর পানি। একসময় মুলাগাছে ভরা জমি এখন বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আষাঢ় মাসেও এমন বৃষ্টি হয় না। এখনো পানি নামেনি। আরও পাঁচ বিঘা জমি পানিবন্দী। জমির চারপাশে পুকুর থাকায় পানি নামতে পারছে না। কৃষি অফিসের স্যারেরা মাঠে গিয়ে খবর নিয়েছেন।’

পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক এক বিঘা জমিতে বি-৮৭ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটা শুরু হওয়ার আগেই নভেম্বরের অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যায়। বাতাসের প্রভাবে ধানগাছ হেলে পড়ে। মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা কাদামাটি মাড়িয়ে হেলে পড়া ধান কাটছেন। আবদুর রাজ্জাকের ছেলে সোহানুর রহমান বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে। শ্রমিক খরচও বেশি হবে। মনে হচ্ছে খরচের টাকাও উঠবে না। তিন দিন পরে বৃষ্টি হলে এই ক্ষতি হতো না।’

জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা গ্রামের কৃষক জাহিদ জানান, সিংগা বিলে তাঁর আধা পাকা দুই বিঘা জমির ধান শুক্রবার রাতের বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই ধান কাটা শুরু হওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ বৃষ্টিতে সব ধান তলিয়ে গেছে। এখন পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে, তবে ধানের বেশির ভাগই নষ্ট হবে।

নভেম্বরের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি কতটা হয়েছে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নিম্নচাপের কারণে নভেম্বরের শুরুতেই অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। মাত্র দুই দিনের বৃষ্টিতে জেলার ২ হাজার ১৫০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।’ তিনি জানান, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবায়ন করা হবে। 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন