[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

১০ টাকার শেয়ারে বছরের ক্ষতি ২৪৯ টাকা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত লুটপাটের শিকার ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ১০ টাকার শেয়ারে এক বছরে লোকসান হয়েছে প্রায় ২৪৯ টাকা। ২০২৪ সালে ব্যাংকটির খাঁটি হিসাব লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরে ২৯২ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছিল ব্যাংকটির।

ব্যাংকটি গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে। ওই সারসংক্ষেপ পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান ২৪৮ টাকা ৯১ পয়সা হারে ব্যাংকের খাঁটি হিসাব লোকসান হয়েছে ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের বছরে শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৮২ পয়সা হারে খাঁটি হিসাব লোকসান হয়েছিল ২৯২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের খাঁটি হিসাব লোকসান বেড়েছে ২৫ হাজার ৫০১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা ৮৮ গুণ।

ইউনিয়ন ব্যাংকসহ দুরবস্থায় পতিত হওয়া ইসলামি ধারার ৫টি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৫ ব্যাংক একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংক করা হচ্ছে। অন্য ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে। আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। নতুন ব্যাংকটির চেয়ারপারসন হবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।

একীভূতকরণের অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জানাতে ৫ নভেম্বর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোর শেয়ারমূল্য শূন্য ঘোষণা করেন।

এ সময় গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর শেয়ারের দাম ঋণাত্মক ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা পর্যন্ত হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর শেয়ারধারীদের জরিমানা করা উচিত। আমরা তা না করে তাদের মালিকানা শূন্য করে দিয়েছি। ব্যাংকগুলোতে যারা লুটপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দুদকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে মামলা করা হচ্ছে।’

গভর্নরের বক্তব্যকে ঘিরে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার জন্ম দেয়। বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতসংশ্লিষ্টরাও এর সমালোচনা করেন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে আওয়াজ তোলেন তাঁরা।

এরপর ৯ নভেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের শূন্য দাম নিয়ে গভর্নরের ঘোষণাই চূড়ান্ত নয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বলেছি যে এটা আমরা দেখব। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যেটা বলেছেন, সেটাই চূড়ান্ত কথা নয়।’

২০২৪ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৩৭ টাকা ৪৪ পয়সা। সেই হিসাবে সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ২৪ হাজার ৬০৫ কোটি ৪৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানত ১৭ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মূলধন ঘাটতি ১৫ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। ব্যাংকের বিনিয়োগ ২৮ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা, যার বিপরীতে খেলাপি ঋণ বা আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা বা ৮৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

একীভূত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ঘোষণা দিয়ে ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন বন্ধ রেখেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ফলে এই তথ্য প্রকাশেও পুঁজিবাজারে এর কোনো প্রভাব নেই।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘এই তথ্য ব্যাংকের ইনভেস্টরদের জন্য হয়তো দেওয়া হচ্ছে। তাদের যে কোনো কিছু আর অবশিষ্ট নেই। তার জন্য হয়তো এই তথ্য জানাচ্ছে। এতে শেয়ারহোল্ডার জানতে পারছে। এর বাইরে আর কোনো কার্যকারিতা নেই আপাতত।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন