[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল ২২ বছরের তানিয়া, মাসে আয় লাখ টাকা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
তানিয়া খলিল | ছবি: তাঁর সৌজন্যে

তানিয়া খলিলের (২২) বিয়ে হয় অল্প বয়সে। বিয়ের বছরখানেকের মধ্যেই তিনি মা হন। সংসার ও শিশুসন্তান সামলানোর পাশাপাশি তিনি নিজে ফ্রিল্যান্সিং শিখে অন্যদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এখন তার মাসিক আয় প্রায় এক লাখ টাকা।

তানিয়ার বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার বাজারপাড়া এলাকায়। ২০২১ সালে মাটিরাঙ্গা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়। স্বামী ইব্রাহিম খলিল পেশায় ফ্রিল্যান্সার। স্বামীর প্রভাবে তানিয়া ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করেন। ২০২৩ সালের শুরুতে তারা দুজন খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসেন এবং সেখানে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালাচ্ছেন।

তানিয়া বলেন, বিয়ের পর পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। এর মধ্যেও ঘরে বসে কিছু করতে চেয়েছিলেন। তখন স্বামী ইব্রাহিম খলিল তাকে ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য উৎসাহ দেন, যা তানিয়া হাতছাড়া করেননি।

 
প্রথম আয় আমাকে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মনে হয়েছিল, সত্যিই কিছু করার সামর্থ্য আছে আমার।
—তানিয়া খলিল, ফ্রিল্যান্সার
তানিয়া খলিল বলেন, ‘আমি প্রথমে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শেখা শুরু করি। রং, লে আউট, টাইপোগ্রাফি—সবই আমার কাছে নতুন ছিল। কিন্তু নিজের আগ্রহের কারণে দ্রুত শিখে ফেলি। কয়েক মাসের মধ্যেই নিজেকে ফ্রিল্যান্সিং বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে সক্ষম হই।’

ফ্রিল্যান্সিং শেখার সময়ই ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম কাজ পান তানিয়া। লোগো ডিজাইন করে সেই মাসে তিনি ১৩ ডলার আয় করেছিলেন। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। সেই স্মৃতি মনে করে তানিয়া বলেন, ‘প্রথম আয় আমাকে অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মনে হয়েছিল সত্যিই কিছু করার সামর্থ্য আছে আমার।’

তিনি আরও বলেন, লোগো ডিজাইনের পর ব্র্যান্ড আইডেনটিটি, বিজনেস কার্ড, লেটারহেড তৈরিসহ নানা ধরনের কাজে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রাহকদের খুশি করতে পারায় দ্রুতই আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম বাড়ে তাঁর। এরপর একের পর এক কাজ আসে এবং আয়ও সমানতালে বাড়তে থাকে। বর্তমানে তিনি ফাইভারের পাশাপাশি আপওয়ার্কে ফ্রিল্যান্সের কাজ করছেন। 
 

সম্প্রতি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের দোতলায় প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের বিশাল কক্ষে সারিবদ্ধভাবে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন তরুণী। তানিয়া তাঁদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। একটু শুনতেই বোঝা গেল তানিয়া তরুণীদের গ্রাফিক ডিজাইন কীভাবে করতে হয়, তা নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। 

তানিয়ার জন্য এসব কাজ অবশ্য সহজ ছিল না। সময়মতো কাজ জমা দেওয়া, গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ, সন্তানকে দেখাশোনা—সব মিলিয়ে প্রতিদিনই ছিল চ্যালেঞ্জের। তানিয়া বলেন, ‘পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে এটি সম্ভব হতো না। আমার স্বামী এখনো আমার সবচেয়ে বড় সহযোগী।’

খাগড়াছড়ি শহরে নারীদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তানিয়া খলিল। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

তানিয়া শুধু নিজে ফ্রিল্যান্সিং করেননি। তিনি খাগড়াছড়ির অন্য তরুণীদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ২০২১ সাল থেকে স্বামীর প্রতিষ্ঠান ‘খলিল আইটি’-তে যুক্ত রয়েছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদের অনেকেই এখন ঘরে বসে আয় করছেন।

২০২৩ সালে স্বামী-স্ত্রী মিলে মাটিরাঙ্গা থেকে খাগড়াছড়ি সদরে চলে আসেন। সেখানে দুজনের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু হয়। বর্তমানে খাগড়াছড়ি গেট এলাকায়ও তাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে।

সম্প্রতি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের দোতলায় প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের বিশাল কক্ষে সারিবদ্ধভাবে ল্যাপটপ নিয়ে বসে রয়েছেন কয়েকজন তরুণী। তানিয়া তাঁদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। শুনেই বোঝা যায়, তিনি তরুণীদের গ্রাফিক ডিজাইন শেখাচ্ছেন এবং নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সুমা জান্নাত বলেন, ‘চার মাস শেখার পরই কাজ শুরু করি। এখন ঘরে বসে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারি।’ আরেক শিক্ষার্থী তৃণা রোয়াজা বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং শিখে এখন নিজেই আয় করি। পরিবারের কাছে হাত পাততে হয় না। পড়াশোনার খরচও নিজে চালাতে পারছি।’

নিজের শিক্ষার্থীদের সাফল্যে খুশি তানিয়া খলিল বলেন, ‘এখন অসংখ্য সুযোগ আছে। একটি কম্পিউটার আর মনোযোগ থাকলেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।’ তিনি প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।

খাগড়াছড়ি মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুস্মিতা খীসা বলেন, ‘নারীদের আইসিটি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণে সরকার কাজ করছে। ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং—এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তানিয়া খলিল নিজে দক্ষতা অর্জন করে অন্য নারীদেরও এগিয়ে নিচ্ছেন। আমাদের অনেক সময় অস্থায়ী প্রশিক্ষকের প্রয়োজন হয়, তখন তাঁর কথা বিবেচনা করা হবে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন