ইভিএম রাখতে মাসে খরচ ৩৩ লাখ
![]() |
| ইভিএম | ফাইল ছবি |
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) থেকেও ইভিএম সংক্রান্ত অংশ বাদ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ইভিএম ব্যবহার হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ অবস্থায় ‘প্রায় অকেজো’ ইভিএমগুলো রাখতে কমিশনকে প্রতি মাসে মাঠপর্যায়ে সাড়ে ৩৩ লাখ টাকা গুদামভাড়া দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ওয়্যারহাউসে ইভিএম রাখার বকেয়া ভাড়া ৬২ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পের ডিপিপিতে ইভিএম সংরক্ষণের বিষয় না থাকায় বকেয়া পরিশোধে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালে দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প পাস করা হয়েছিল। ১০ বছরের মেয়াদে এই যন্ত্রগুলোর বেশির ভাগই ৫ বছরের মাথায় অকেজো হয়ে গেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আরপিওর সংশোধনীতে ইভিএম সংক্রান্ত অংশ বাদ দেয়ায় যন্ত্রগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি জানি না। বিষয়টি সরকারের নজরেও দেওয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে ইভিএমের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ইসি সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নয়টি অঞ্চলের ৪১ জেলায় ইভিএম সংরক্ষণের জন্য গুদাম ছিল। ২০২২ সালের ১ জুলাই ৩০টি, ২২ জুলাই একটি, ২০২৩ সালের ১ মে একটি, ১ জুন একটি, ১ জুলাই তিনটি, ১ আগস্ট একটি, ১ সেপ্টেম্বর দুটি এবং ১ অক্টোবর তিনটি গুদাম ভাড়া নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ভ্যাটসহ এসব গুদামভাড়া বাবদ খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে ভ্যাটসহ ৩৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ‘নিজস্ব গুদাম না থাকায় ইভিএম সংরক্ষণে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে কমিশন এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
ইভিএম সংরক্ষণের বকেয়া ভাড়া ৬২ কোটি টাকার বেশি। তবে প্রকল্পের ডিপিপিতে এ সংরক্ষণের বিষয় না থাকায় বকেয়া পরিশোধে জটিলতা তৈরি হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠালেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করা সমীচীন নয়। ইভিএমসহ ব্যর্থ প্রকল্পের দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত ঠেকাতে নজরদারি জরুরি।’
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নেওয়া ইভিএম প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ থেকে ২০২৩। ইসির চাহিদায় পরে মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ৮৬ হাজার বিএমটিএফে সংরক্ষিত, প্রায় ৬২ হাজার মাঠপর্যায়ে, এবং নির্বাচন ভবনে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইভিএম আছে।
ইভিএমের আয়ুষ্কাল ১০ বছর হলেও ৫ বছরের মাথায় অধিকাংশ অকেজো হয়ে গেছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৪৫–৫০ হাজার ইভিএম নির্বাচনযোগ্য ছিল। ৬০–৭০ হাজার বিকল হলেও মেরামতযোগ্য, বাকিগুলো মেরামতযোগ্য নয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে মেরামতের জন্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল, তবে তৎকালীন সরকার তা দেননি। ফলে ইভিএমগুলো ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় নেই।
ইভিএম প্রথম ব্যবহার হয় ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। পরে ছোট আকারে নির্বাচনে ব্যবহার শুরু হয়। ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সমস্যার কারণে ব্যবহার বন্ধ হয়। ২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশনের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর ২০১৮ সালে দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয়। ২০২৪ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ২৬ জুন পর্যন্ত ইসির তথ্য অনুযায়ী, ইভিএমে মোট ১ হাজার ১৪৩টি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এতে রয়েছে জাতীয় সংসদ, উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন নির্বাচনের হিসাব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন