নির্বাচনী ট্রেনে বিএনপি
![]() |
| কার্টুন: পদ্মা ট্রিবিউন |
অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা জানালেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা ছিল। কিন্তু গত সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি ২৩৭ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলে পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যায়। এর পরই দেশজুড়ে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করে। সবাই এখন একটাই প্রশ্ন করছে-নিজ এলাকা থেকে বিএনপির প্রার্থী কে? সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নাম ঘোষণার পর সরাসরি নিজেদের এলাকায় ছুটে গেছেন।
তাঁরা শুরু করেছেন গণসংযোগ। ভোটারদের সমর্থন পেতে হাটে, মাঠে, ঘাটে দৌড়াচ্ছেন। দেশটির সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেশকে নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখন দেশে পুরো নির্বাচনী আমেজ।
সাধারণ মানুষও এখন নির্বাচন ও ভোট নিয়েই আলোচনা করছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে।
দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রথমে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের বাড়ি যান। অনেকের মন খারাপ থাকলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে বেশির ভাগই ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর সোমবার রাতের দিকে কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, মাদারীপুরের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মী-সমর্থকরা। এছাড়া শরীয়তপুর, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়াতেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। তবে মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনে মনোনয়ন পাওয়া কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যারা মনোনয়ন পাননি, বিশ্বাস রাখুন, ইনশাআল্লাহ দল আপনাদের যথাযথ দায়িত্ব ও সম্মান দেবে। আমরা সবাই মিলে আপনাদের পাশে থাকব এবং কাজ করব ইনশাআল্লাহ। বিএনপির যোগ্যতা আছে দেশকে মর্যাদার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিটি আসনে বিএনপির পাঁচ-সাতজন যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী দেড় হাজারের বেশি প্রার্থীর সঙ্গে তারেক রহমান বৈঠক করেছেন। কিন্তু আমাদের নির্বাচনী আসন ৩০০। শরিক দলগুলোকে কিছু আসন ছাড়তে হবে। তাই সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। ২৩৭ জনের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে মাত্র চার-পাঁচটি আসনে বিক্ষোভ হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ফলে কাউকে না কাউকে ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।’
বিএনপি ঘোষিত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসন থেকে ভোটে লড়বেন। দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রথমবারের মতো বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন। দলের স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য ছাড়া বাকি সবাই এবং পরিচিত প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ২৩৭ আসনের মধ্যে এবার শতাধিক নতুন মুখকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
মনোনয়ন ঘোষণার আগে তারেক রহমান জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মাধ্যমে সব আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ত্যাগী ও জনপ্রিয় প্রার্থীদেরই বেছে নিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকলেও একক প্রার্থী ঘোষণার বাধ্যবাধকতার কারণে দফায় দফায় মতবিনিময় করেছেন তারেক রহমান। যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থেকে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ছুটে গেছেন। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিয়েই শুরু করেছেন প্রচারণা। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটসংক্রান্ত সন্দেহ-সংশয়ও এখন কেটে গেছে। প্রার্থীরা বলছেন, সোমবার সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য।
পঞ্চগড়-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী ফরহাদ হোসেন আজাদ জানান, 'তাঁর এলাকায় দলীয় সকলেই একসঙ্গে ধানের শীষের প্রচারণা শুরু করেছেন।'
নাটোর-২ আসনের ধানের শীষ প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘গত তিন নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর তারা ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পরই নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে।’
নওগাঁ-৩ আসনের মনোনয়ন পাওয়া বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল মিনি স্টেডিয়ামে দুই রাকাত শুকরিয়ার নামাজ আদায় করেন। দেশ, জাতি ও দলের অগ্রগতি কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ-৬ আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম রেজাউল ইসলাম রেজু বলেন, ‘এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। মাঠ পর্যায়ে সবাই একসঙ্গে ধানের শীষের প্রচারণা শুরু করেছেন।’
তবে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার আগেই অন্য কিছু দল তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, এলডিপি প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। আজ বুধবার সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে গণসংহতি আন্দোলন।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, ‘চূড়ান্ত তালিকাটা সময়মতো কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হবে। আমরা একা নির্বাচন করব না, দেশ ও জাতির স্বার্থ বিবেচনায় নেব।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগে থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। মঙ্গলবার তারা ১২ সদস্যের ‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ ঘোষণা করেছে। কমিটি দলের সার্বিক প্রস্তুতি, প্রার্থী বাছাই, মাঠ সমন্বয়, আইনি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম, মিডিয়া ও প্রচারণা, প্রশিক্ষণ ও মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করবে।
বিএনপির একজনের মনোনয়ন স্থগিত, চার নেতা বহিষ্কার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করলেও মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনের প্রার্থী কামাল জামান মোল্লারের নাম স্থগিত করা হয়েছে।
দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, হানাহানি ও সড়ক অবরোধসহ জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ড করার কারণে চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলাধীন সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কদমরসুল, ভাটিয়ারী বাজার, জলিল গেট এলাকায় সহিংসতা, হানাহানি ও সড়ক অবরোধে লিপ্ত হওয়ায় (আসলাম চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত) সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আলাউদ্দিন মনি, সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বাবর, সীতাকুণ্ড পৌরসভার আহ্বায়ক মামুন এবং যুবদলের সোনাইছড়ির সাধারণ সম্পাদক মমিন উদ্দিন মিন্টুকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন