নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কমিটির সক্রিয়তা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা
![]() |
| জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিষিদ্ধ সংগঠনের কাজ চালানোর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তাদের কমিটি সম্প্রসারিত করেছে। এই খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা। অন্যান্য সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রতিক্রিয়া। সমালোচনার মুখে প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের অক্টোবরে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে দলটির সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনটির কমিটি নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই ছিল। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সেই কমিটি বর্ধিত করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১ সদস্যের বর্ধিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। পদপ্রাপ্ত নেতাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দাপ্তরিক প্যাডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়নি।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি ইব্রাহিম ফরাজিকে সভাপতি এবং এস এম আকতার হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ সদস্যের একটি আংশিক কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। তবে সম্প্রতি ক্যাম্পাসের বাইরে মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের। তা করতে গিয়ে অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
এখন কমিটি বর্ধিত করার খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, যে সংগঠন নিষিদ্ধ, তাদের কমিটি কীভাবে হয়? এটি প্রশাসনের ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়। যেখানে জুলাই আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে বিচার হওয়ার কথা, সেখানে তাদের নতুন কমিটি হচ্ছে!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীভাবে রাজনীতি করে ছাত্রদলসহ সব সক্রিয় ছাত্রসংগঠনকে ক্যাম্পাসের বাইরে রেখেছে। এখন তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়ে গোপনে রাজনীতি শুরু করেছে। নিষিদ্ধ এই সংগঠনের তৎপরতা দেশের সব ক্যাম্পাসের সুস্থ ছাত্ররাজনীতির জন্য হুমকি। ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি ধ্বংসকারী এই সংগঠনের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান নেবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘ছাত্রলীগ যেভাবে ক্যাম্পাসে দমন–পীড়ন চালিয়েছে এবং জুলাই আন্দোলনে আমাদের ওপর হামলা করেছে, সেই অনুযায়ী এখনো তাদের বিচার হয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনেকবার বলেছি, ছাত্রলীগের যেসব নেতা–কর্মী অপরাধে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। কিন্তু প্রশাসন শুধু আনুষ্ঠানিক কাজ করছে। ফলে ছাত্রলীগের অনেকেই এখনো অনলাইনে সক্রিয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ফেসবুক ও কিছু সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, ছাত্রলীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছে। ছাত্রলীগ একটি নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন। যারা জুলাই অভ্যুত্থানসহ গত ১৭ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, দমন–পীড়ন ও নির্যাতনের রাজত্ব চালিয়েছে। তারা যদি আবার সুযোগ পায়, আগের মতো হত্যা, গুম ও সন্ত্রাস শুরু করবে। তাই তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া যায় না।’
এদিকে কমিটি ঘোষণার পর অনলাইনে সক্রিয় হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। সেখানে বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা তাঁরা করছেন না।
সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ করার কারণে যদি বহিষ্কার করা হয়, তাহলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলে দিও, সভাপতি হিসেবে প্রথমে যেন আমাকে বহিষ্কার করা হয়।’ সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরুল কায়েস শিশির লিখেছেন, ‘এই পরিচয় জগন্নাথ ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা–কর্মীর রক্ত দিয়ে কেনা। কেউ অস্বীকার করবে না। তোমাদের মব বাহিনী জীবন নিয়ে নিচ্ছে, তাতেও কেউ ভয় পায় না। বহিষ্কার নিয়ে এত দুশ্চিন্তা কেন, ক্যাম্পাসে তো এমনিতেই ঢুকতে দাও না।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামরুল হোসাইন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অন্যায় সিদ্ধান্ত নিলে, তার দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ কোনো কষ্ট বা অপমানের শিকার হয়নি। এখন যদি তারা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায়, তবে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও তার ফল ভোগ করতে হবে।’
ছাত্রলীগের সক্রিয় হওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তাজাম্মুল হক বলেন, কমিটি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু দেখা যায়নি। কেউ অভিযোগ দিলে সেটা প্রমাণিত হওয়ার পর, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে, এটা শুনেছি। তবে এখনো কোনো কাগজপত্র দেখিনি। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলে তবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত ৪২১ শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়ে তাঁদের বিচারের দাবি গত ২০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জানিয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। এতে ছাত্রলীগ কমিটি সক্রিয় হতে উৎসাহিত হচ্ছে বলে অভিযোগ ছাত্রদলের।
এ নিয়ে উপাচার্য বলেন, জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রশাসন একটি কমিটি করেছে। কমিটি তথ্য উপস্থাপন করলে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। ছাত্রদল যে তালিকা দিয়েছে, তা–ও কমিটির কাছে আছে। যাচাই–বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Comments
Comments