দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ মামলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই ভাই নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। বুধবার রাত ১২টার দিকে নিহত মিলন আলীর ছেলে সাদেক আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও দুটি আলাদা মামলা হয়েছে।
নাচোল থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলায় ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০–৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। সব কটি মামলা বিএনপি নেতা আবদুস সালাম (তুহিন) ও আবু তাহের (খোকন) পক্ষের কর্মীরা করেছেন।
তিনি আরও জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে এখনো এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। স্থানীয় গ্রামবাসী এজাহারভুক্ত এক আসামির জামাতাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন। হামলাকারীরা সাবেক সাংসদ আমিনুল ইসলামের অনুসারী হলেও মামলায় তাঁর নাম নেই।
গত মঙ্গলবার নাচোল উপজেলার মারকইল এলাকায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলামের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম ও আবু তাহেরের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় মিলন আলী ও রাতে আলম আলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বৃহস্পতিবার সকালে মারকইল সাহাপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত দুই ভাইয়ের লাশের জন্য স্বজনেরা অপেক্ষা করছেন। একই ঘটনায় আহত দুই ভাই মো. আমিরুল ও মো. শরিফুল এবং ভাতিজা মো. তুষার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁরা জানাজা ও দাফনে অংশ নেবেন। স্থানীয় ফুলবাড়ি, সনকার ও মারকইল গ্রামের যৌথ কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
নিহতদের স্বজনেরা জানান, হামলাকারীরা জানালা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢুকে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে চার ভাই ও দুই ভাতিজাকে গুরুতর আহত করেন। মিলন আলীর ছেলে রাব্বানী এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বাড়ির বাইরে চারদিক খোলা একটি ছোট চালের নিচে দড়ির খাটে শুয়ে আছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফেরা আমিরুল ইসলাম। তাঁর এক পা ভেঙে গেছে। পায়ের পাতা থেকে উরু পর্যন্ত প্লাস্টার করা। তাঁকে ঘিরে কাঁদছিলেন ছোট বোন তারা বানু ও এক ফুপু।
অপ্রকৃতিস্থ কণ্ঠে আমিরুল ইসলাম বললেন, ‘দুই ভাইকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করলাম। চার ভাই, দুই ভাতিজা মিলে গিয়েছিলাম দুই গাড়িতে। ফিরেছি এক গাড়িতে। এক ভাতিজাও হয়তো আল্লাহর কাছে চলে যাবে। ভালোই হয়েছে, এর চেয়ে আর কী ভালো হতে পারে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, গত রোববার আমিনুল ইসলামের অনুসারী তরিকুল আলমকে সালাম গ্রুপের লোকজন মারধর করেন। এর জেরেই মঙ্গলবার আমিনুলের অনুসারীরা ওই হামলা চালান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন