সিলেটে গুমবিষয়ক তথ্যচিত্রে অংশ নিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ
![]() |
গুমবিষয়ক তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর ও নলজুরি এলাকা পরিদর্শন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। শনিবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সিলেটে এসেছেন। তবে তাঁর সফর রাজনৈতিক নয় বলে জানিয়েছেন সিলেট বিএনপির নেতারা। তাঁদের ভাষায়, তিনি গুমবিষয়ক একটি তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে সিলেট গেছেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সালাহউদ্দিন আহমদ। এ সময় তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিএনপির নেতারা। সেখান থেকে তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল স্থলবন্দরে যান।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় কোনো কর্মসূচিতে নয়, সালাহউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়ার ঘটনায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গুম কমিশনের উদ্যোগে নির্মিত তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে এসেছেন। এ সময় তিনি ২০১৫ সালে নিজের গুম হওয়ার ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন।
আবদুল কাইয়ুম বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদকে চোখ বেঁধে কাদার মধ্যে দিয়ে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে সিঁড়ি বেয়ে একটি উঁচু জায়গায় উঠিয়ে এক বাড়িতে রাখা হয়। সেখানে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় কথা বলছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার কথাই তিনি জানিয়েছেন।
স্মৃতিচারণার পাশাপাশি তিনি সিলেটের বিএনপি নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নেন এবং দলের সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন। তবে তিনি কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। সন্ধ্যায় বিমানে তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিন আহমদকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ। বিএনপির পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই তাঁকে তুলে নিয়েছেন। তখন সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে ছিলেন।
এর দুই মাস পর, ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহরে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। ভারতীয় পুলিশের দাবি ছিল, সালাহউদ্দিন সেখানে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। স্থানীয় লোকজনের ফোন পেয়ে তাঁকে আটক করা হয়। এরপর বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে মেঘালয় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে।
২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে ২০১৮ সালে আদালত তাঁকে খালাস দেন। পরে ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, তাই তাঁকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাঁকে দেশে ফেরার অনুমতি দেয়। একই বছরের ৮ মে তিনি আসাম রাজ্য সরকারের কাছে দেশে ফেরার অনুমতি বা ‘ট্রাভেল পাস’-এর জন্য আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন, অনুপ্রবেশের মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়, ভারতে থাকার কারণে তিনি তা নবায়ন করতে পারেননি। দেশে ফিরে তিনি পরিবার ও দেশবাসীর সঙ্গে দেখা করতে চান।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন। এরপর চলতি বছরের ৩ জুন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দায়ের করেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন