[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সুনামগঞ্জে বালু লুটের মামলার আসামি খোদ আন্দোলনকারীরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
যাদুকাটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মামলা হয়েছে | ফাইল ছবি

আলী হোসেনের (২৪) বাড়ি সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর তীরের লাউড়েরগড় গ্রামে। পেশায় তিনি আলোকচিত্রী, থাকেন ঢাকায়। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে এসেছিলেন। এ সময় যাদুকাটা নদীতে বালু লুটের ঘটনা শুরু হলে সেটির ছবি ও ভিডিও তোলেন। সেগুলো পাঠান গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে। তাঁর তোলা বালু লুটের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। অথচ অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে করা মামলার আসামির তালিকায় তাঁর নামও আছে।

সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনায় গত দুই দিনে জেলার তাহিরপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, অন্যটি করেছেন ইজারাদার। দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮৮ জনকে। অজ্ঞাত আসামি আছেন আরও প্রায় ৫০ জন। দুটি মামলাতেই ৬ থেকে ১১ অক্টোবর নদীর লাউড়েরগড় এলাকায় জড়ো হয়ে নদীর পাড় কেটে অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগ করা হয়েছে।

ইজারাদারের পক্ষে করা মামলার আসামির তালিকা নিয়ে সমালোচনা উঠলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলায় আসামির তালিকায় এই নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা–কর্মীসহ বেশ কয়েকজন আলোচিত ব্যক্তির নাম আছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল হক গতকাল বৃহস্পতিবার তাহিরপুর থানায় মামলাটি করেন। এতে ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় উপজেলার সোহালা গ্রামের বাসিন্দা তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বাদাঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন, তাঁর বড় ভাই উপজেলা বিএনপির যুক্ত আহ্বায়ক রাকাব উদ্দিন, উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা বিশ্বজিৎ সরকার এবং নদীতীরের বাসিন্দা মোশাহিদ আলম ওরফে রানু মেম্বারের নাম আছে। রানু মেম্বার একই অভিযোগে এর আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই মামলায় ৩৬ নম্বরে আছে আলোকচিত্রী আলী হোসেনের নাম।

আলী হোসেন বলেন, ‘আমি বালু লুটের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। সবাইকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি। মামলার বাদী পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাও নদীতীরে দাঁড়িয়ে আমার কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন, এখন দেখি আমিই আসামি। আমি বিস্মিত, হতবাক।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোহাইমিনুল হক বলেন, তাঁরা যাচাই–বাছাই করেই আসামির তালিকা করেছেন। যেহেতু একটি নাম নিয়ে কথা হচ্ছে, তাই সেটি সম্পর্কে আবারও খোঁজ নেওয়া হবে।

এর আগের দিন বুধবার একই অভিযোগে থানায় আরেকটি মামলা করেন মোশারফ হোসেন আরির তালুকদার নামে একজন। তিনি যাদুকাটা–১ বালু মহালের ইজারাদার মো. নাছির মিয়ার আত্মীয়। এই মামলায় ৫১ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার ৩৮ আসামি বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই মামলায় বালু উত্তোলনবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনদের আসামি করা হয়েছে। আবার পাড় কাটায় যুক্ত অনেকের নাম বাদ গেছে।

নদীর তীরের ঘাগটিয়া গ্রামের বাসিন্দা কাসমির রেজা দীর্ঘদিন ধরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। তিনি পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি। এবারও নদীতে বালু লুটের ঘটনা শুরু হলে তিনি প্রতিবাদ করেন। অথচ এই মামলায় তাঁর ভাই আস্তারুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এলাকার নারজেল, পারভেজ ও মাসুদ রানা নামের তিনজনকেও আসামি করা হয়েছে। তাঁরা পাড় কাটার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন বলে অনেকে জানিয়েছেন।

কাসমির রেজা বলেন, ‘কারা যোগসাজশে বালু লুট করে, সেটা এলাকাবাসীর জানা। তাই মামলায় আসামি করে বা হুমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমাদের প্রতিবাদ চলবে।’

ইজারাদার নাছির মিয়া বলেন, স্থানীয় সাংবাদিক, গোয়েন্দা সংস্থা ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যাঁরা ঘটনায় যুক্ত ছিলেন, তাঁদেরই মামলায় আসামি করা হয়েছে। আন্দোলনকারী বা প্রতিবাদকারী কাউকে উদ্দেশ্য করে মামলা করা হয়নি।

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য ও সুনামগঞ্জ নদী ও হাওর রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাজু আহমেদ বলেন, প্রশাসন ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কঠোর না হলে শুধু মামলা করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা যাবে না। মামলায় কোনো নিরীহ বা নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, মামলার তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। যারা দোষী নন, তাঁরা বাদ পড়বেন। আবার দোষী অথচ এজাহারে নাম না থাকলে তদন্তে পাওয়া গেলে তাঁদেরও যুক্ত করা হবে। তবে নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর দুটি বালু মহাল এবার ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে মামলা–সংক্রান্ত জটিলতায় গত পাঁচ মাস বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। চলতি মাসে বালু তোলা শুরু হয়। 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন