[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বারনই নদীর জন্য গম্ভীরা, মানববন্ধন ও আলোচনা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

রাজশাহীতে বারনই নদীর দখল ও দূষণের প্রতিবাদে গম্ভীরা গান। সোমবার সকালে জেলার পবা উপজেলার নওহাটায় নদীর ধারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

‘হে নানা দূষণ হইল, নদী মইল, এই দুঃখ কাখে জানাই... হে নানা বারনই নদীর কথা শুনো বইলা যাই, ঐতিহ্যে ভরা আমাদের বারনই।’ গম্ভীরা গানে এভাবেই বরনই নদীর কথা বলছিলেন নানা-নাতি ভূমিকায় মোস্তফা সরকার ও কার্তিক চন্দ্র হালদার। গান ছেড়ে কথায় কথায় বললেন, 'এগারো সাল থেকে এই নদী লিয়্যা কত কিছু লেখলো! এই প্রথম আলো পেপারে জাইল্যাদেরকে লিয়্যা একজাগাতে বইস্যা আলোচনা কইরা তাঁদের কথা লেখলো। কত সাংবাদিক কত মিডিয়াতে লেখলো, কিন্তু এই নদীকে বাঁচানোর লাইগ্যা কেহু আগাইয়া আসল না।'

রাজশাহীর বারনই নদীর দখল, দূষণ ও নদীতীরের মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে সোমবার সকাল থেকে জেলার পবা উপজেলার নওহাটায় নদীর ধারে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে নদীর ধরে মন্দির চত্বরে গম্ভীরা হয়। এরপর নদীর ধারে মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী এই কর্মসূচির আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা এএলআরডি, রুলফাও ও বেলা। বুকস, মাসাউস, পরিবর্তন, দিনের আলো হিজড়া সংঘসহ ১২টি সংগঠন এতে সহায়তা করে।

বারনই নদী রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী এলাকায় শীব নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার শেরকোল পৌরসভায় আত্রাই নদীতে পতিত হয়। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৩ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ প্রস্থ ৯১ মিটার, সর্বনিম্ন ২৭ মিটার এবং গড় প্রস্থ ৫১ মিটার। এটি রাজশাহী ও নাটোর জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, নলডাঙ্গা, নাটোর সদর এবং সিংড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

নদী রক্ষায় গম্ভীরা ও মানববন্ধনের পরে বিকেলে নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘নদীর জন্য একসাথে—নদী রক্ষায় প্রয়োজনে সমন্বিত উদ্যোগ: জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বারনই নদী রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা। সভার সভাপতিত্ব করেন বেসরকারি সংস্থা রুলফাওর নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন।

সামাজিক কল্যাণ পরিষদের নির্বাহী পরিচালক সম্রাট রায়হানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র মকবুল হোসেন, এএলআরডির প্রতিনিধি সানজিদা খান, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য জামাত খান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী পার্থ সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় স্যানাল, বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা সরকার, পরিবর্তনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদ রিপন, বিইউকেএস–এর নির্বাহী পরিচালক হাসিনুর রহমান, সাংবাদিক ওয়ালিউর রহমান প্রমুখ।

দখল ও দূষণ থেকে বারনই নদীকে বাঁচাতে আলোচনাসভা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 
 
বক্তারা বলেন, ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ-ভারতের মুখ্য পরিসংখ্যান কর্মকর্তা উইলিয়াম উইলসন হান্টার তাঁর ‘স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যাকাউন্ট অব বেঙ্গল’ গ্রন্থে লিখেছেন, রাজশাহীর যেসব নদীর নাব্যতা আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে নাব্য নদী হলো বারনই। বারনইয়ের নদপথেই ১৬০৮ সালে বাংলার সুবাদার ইসলাম খান নওগাঁয় এসেছিলেন। কিন্তু এখন সেই বারনই নদী ‘বিষাক্ত’ হয়ে গেছে। দুর্গন্ধের কারণে নদীর কাছে মানুষও যেতে পারে না। রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নওহাটা পৌরসভা, মোহনগঞ্জ হাট, ভবানীগঞ্জ ও তাহেরপুর পৌরসভা, নাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভা এবং আশপাশের ইউনিয়নগুলো থেকে বর্জ্য এই নদীতে ফেলা হয়। বর্তমানে নদী দখল ও দূষণের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। একসময় এই নদী দুই জেলার কৃষক, জেলে ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা এবং সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।

বক্তারা আরও বলেন, প্রাকৃতিক নাব্যতা হারিয়ে গেছে। শিল্পবর্জ্য, পয়োবর্জ্য ও পৌরবর্জ্যের চাপের কারণে বারনই নদীর অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। নদীর বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। উজানে পানির স্বল্পতা, ড্রেজিংয়ের অভাব এবং অব্যাহত দখলের কারণে নদীর নাব্যতা অনেক কমে গেছে। বর্ষাকাল ছাড়া নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। তার ওপর ভয়াবহ দূষণও যুক্ত হয়েছে।

সাবেক মেয়র মকবুল হোসেন বলেন, 'এই নদীতে আমরা ছোটবেলায় ইলিশ মাছ পেতাম, শুশুক দেখতাম। এখন দূষণের কারণে নদীতে কোনো মাছ বাঁচে না।'

নদী রক্ষা আন্দোলনকারীরা বলছেন, বারনই নদী টিকিয়ে রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে দূষণ বন্ধ করতে হবে, বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করতে হবে, নদীপথ পুনঃখনন করতে হবে এবং নদী দখলমুক্ত করতে হবে। নইলে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন