প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার: জরিপ
| নারী নির্যাতন | প্রতীকী ছবি |
দেশে প্রতি চার নারীর মধ্যে তিনজন জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গী বা স্বামীর সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
শারীরিক, যৌন, মানসিক, অর্থনৈতিক সহিংসতা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন নারীরা। তবে সামগ্রিকভাবে এই সহিংসতার হার ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কমে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ এই তথ্য জানানো হয়েছে। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তুলে ধরেন বিবিএসের উপপরিচালক মিনাক্ষী বিশ্বাস।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৭৬ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গীর সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ গত এক বছরে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সহিংসতার শিকার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন (৬২ শতাংশ) অভিজ্ঞতা কখনো প্রকাশ করেননি।
জরিপে আরও বলা হয়েছে, ১৫ শতাংশ নারী ১৫ বছর বয়স থেকে সঙ্গী নয় এমন ব্যক্তির মাধ্যমে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। দুই শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। স্বামীর সহিংস আচরণ ২০১৫ সালে ৬৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
জরিপে দেখা গেছে, কম বয়স, যৌতুক প্রথা, স্বামীর মাদকাসক্তি বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং শহুরে বস্তিতে বসবাস করা নারীরা স্বামীর মাধ্যমে বেশি সহিংসতার শিকার হন। স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায়। কম বয়স, সীমিত শিক্ষা ও প্রতিবন্ধিতার কারণে নারীরা সঙ্গী নয় এমন ব্যক্তির কাছে বেশি সহিংসতার শিকার হন।
যৌন সহিংসতা বেশি
জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি নারী (৫৪ শতাংশ) জীবদ্দশায় স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ গত ১২ মাসে একাধিকবার এ ধরনের সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৭ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক সহিংসতা এবং ৫ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা নারীর সঙ্গে শারীরিক সহিংসতার ঘটনায় বেশি জড়িত। আর পুরুষ আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিতজনের মাধ্যমে নারীরা বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হন।
ডিজিটাল মাধ্যমে সহিংসতা
জরিপে দেখা গেছে, ৮.৩ শতাংশ নারী প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে যৌন ব্ল্যাকমেল, ছবি নিয়ে অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ অন্তর্ভুক্ত।
পরিষেবা চাওয়ার হার কম
জরিপে দেখা গেছে, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে সাহায্য চাওয়ার হার খুব কম। মাত্র ১৪.৫ শতাংশ নারী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। স্বামীর কাছে সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭.৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। অধিকাংশই স্থানীয় নেতার কাছে সাহায্য চেয়েছেন।
অন্যদিকে, জীবনসঙ্গী নয় এমন কারও কাছে সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৩.৮ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং সবচেয়ে বেশি পুলিশের কাছেই সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারীরা কোথায় অভিযোগ জানাবে সেই সচেতনতাও কম। প্রতি দুজনের মধ্যে একেরও কম নারী (৪৮.৫ শতাংশ) জানেন না কোথায় সহিংসতার অভিযোগ জানানো যায়। মাত্র ১২.৩ শতাংশ নারী সহিংসতার সহায়তাকারী হেল্পলাইন ১০৯ সম্পর্কে জানেন।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারি। অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।
Comments
Comments