[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

শুধু ডিজিএফআইয়ের লোগোর সঙ্গে মিল থাকায় শাপলা না দেওয়া বৈষম্যমূলক: এনসিপি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) | ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলের প্রতীক হিসেবে শাপলা না দেওয়া নিয়ে দীর্ঘ ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, শাপলা প্রতীক না দেওয়া তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব এবং স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের প্রমাণ। দলটি মনে করছে, প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের একরোখা আচরণ তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন তুলছে। এতে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার চেষ্টা এবং সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার আগ্রহও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।

এনসিপি আরও বলেছে, শুধু ডিজিএফআইয়ের লোগোর সঙ্গে কিছুটা মিল থাকাকে কারণ দেখিয়ে তাদের শাপলা প্রতীক না দেওয়া বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী।

শুক্রবার বিকেলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এই ব্যাখ্যা নিজের ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ করেন।

নাহিদ ইসলামের বরাতে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন প্রতীক তালিকায় যুক্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে এবং ওই কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করার চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে। এনসিপির একটি প্রতিনিধিদল ওই কমিটির একজন সদস্যের সঙ্গে ৪ জুন কমিশনে বৈঠক করে। বৈঠকে কমিশন আশ্বস্ত করে যে চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকবে। এরপর ২২ জুন এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে এবং দলের পক্ষে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের জন্য আবেদন জানায়।

নাহিদ ইসলাম জানান, শাপলা প্রতীক বরাদ্দের আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষও এনসিপির প্রতীক হিসেবে শাপলাকে চিনতে শুরু করে। কিন্তু ৯ জুলাই সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, নির্বাচন কমিশন শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৩ জুলাই এনসিপির প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে এবং লিখিতভাবে জানায়, শাপলাকে জাতীয় প্রতীক হিসেবে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আইনানুগ নয় এবং এর কোনো বৈধ ভিত্তি নেই।

এনসিপি যুক্তি দিয়েছে, শাপলা জাতীয় প্রতীকের চারটি উপাদানের একটি মাত্র উপাদান। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বিএনপিকে ‘ধানের শীষ’, জেএসডিকে ‘তারা’, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিকে ‘কাঁঠাল’ এবং তৃণমূল বিএনপিকে ‘সোনালী আঁশ’ বরাদ্দ দিয়েছে। তাই শাপলাকে প্রতীকের তালিকায় রাখার আইনি কোনো বাধা নেই। 

নাহিদ ইসলামের বরাতে জানা যায়, এনসিপির প্রতিনিধিদল দফায় দফায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে ১৩ জুলাইয়ের আবেদনের অগ্রগতি জানতে চায়। কিন্তু কমিশন কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা বা অবস্থান প্রকাশ করেনি। ১৩ জুলাইয়ের পরও কোনো বৈঠকে বা সংবাদমাধ্যমে শাপলা প্রতীক অন্তর্ভুক্তির আইনি বাধার কথা বলা হয়নি। ফলে, এনসিপি মনে করছে, শাপলাকে প্রতীক হিসেবে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আইনি ভিত্তি ছাড়া নেওয়া হয়েছে এবং এটি দলটির প্রতি বিরূপ মনোভাব ও স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।

নাহিদ অভিযোগ করেন, ৩ আগস্টের বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, কিছু সংস্থা যেমন ডিজিএফআইয়ের লোগোতে শাপলা থাকার কারণে আইনগত বাধা না থাকলেও এনসিপিকে শাপলা দেওয়া হয়নি। তবে এনসিপির প্রতিনিধিদল এই বৈষম্যের তুলনা দেখিয়েছে—বাংলাদেশ পুলিশের লোগোতে ধানের শীষ, বিমানবাহিনীর লোগোতে ইগল এবং সুপ্রিম কোর্টের লোগোতে দাড়িপাল্লা থাকলেও নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বিএনপি, এবি পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীকে এই প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে।

নাহিদ বলেন, শুধু ডিজিএফআইয়ের লোগোর সঙ্গে সামান্য মিল দেখিয়ে শাপলা বরাদ্দ না দেওয়া বৈষম্যমূলক ও স্বেচ্ছাচারী। এতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এছাড়া জনমনে প্রশ্ন ওঠে, কমিশন কি রাষ্ট্রীয় কোনো বাহিনীর কাছে নতি স্বীকার করছে, অন্য রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিচ্ছে বা কারও প্রভাব গ্রহণ করছে। উল্লেখ্য, শাপলা প্রতীক না দেওয়ার বিষয়টি একটি বড় রাজনৈতিক দলের তৎপরতা হিসেবে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর কমিশনের সিনিয়র সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার প্রতীক তালিকায় শাপলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তাই এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব নয়। নাহিদ ইসলাম এই সিদ্ধান্তকে স্বেচ্ছাচারী এবং দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কমিশনের একরোখা এই কার্যকলাপ তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তোলে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন এবং সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

সবশেষে নাহিদ আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার মাধ্যমে এনসিপিকে ১. শাপলা, ২. সাদা শাপলা বা ৩. লাল শাপলার মধ্যে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করবে। তিনি চান, কমিশন এমনভাবে সিদ্ধান্ত নিক যাতে তাদের আগের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব পরিত্যাগ হয় এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং সব দলের জন্য সমান সুযোগের প্রতি জনমনে কোনো প্রশ্ন না থাকে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন