‘ডায়াবেটিসে মৃত্যু’ দাবি শ্বশুরপক্ষের, তবে গৃহবধূর শরীরে মারধরের চিহ্ন
| নারী নির্যাতন | প্রতীকী ছবি |
বাবার বাড়ির লোকজনকে বলা হয়েছিল, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গৃহবধূ মনিয়ারা বেগম ওরফে খুকি (৩০) সুগার কমে মারা গেছেন। কিন্তু গোসল করানোর সময় স্বজনেরা দেখেন, তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হলে স্বামী জুলফিকার আলী পালিয়ে যান। খবর পেয়ে পুলিশ স্বামীর বাড়ি থেকে মনিয়ারার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
আজ বুধবার সকালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের সরদারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মনিয়ারার স্বামী জুলফিকার কৃষিকাজের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকে আরবি শেখাতেন বলে জানা গেছে।
মনিয়ারার বাবার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, স্বামী জুলফিকারসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁকে দুই দিন ধরে মারধর ও নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় স্বজনদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
দুপুরে লাশ উদ্ধারের সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিচারের দাবিতে জুলফিকারের বাড়ি ঘেরাও করলে পুলিশ পলাতক জুলফিকারের মা–বাবা ও এক ভাতিজাকে থানায় নিয়ে যায়।
মৃত মনিয়ারার স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর আগে সরদারপাড়ার জুলফিকারের সঙ্গে দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের শিকারপুর এলাকার মনিয়ারা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় মনিয়ারাকে মারধর করতেন জুলফিকার। এ নিয়ে একাধিক সালিসও হয়েছে। তাঁদের সংসারে দুই সন্তান আছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন মনিয়ারাকে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। পরে রাত দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মনিয়ারা মারা যান।
মনিয়ারার চাচা সামিউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, তাঁদের জানানো হয়েছিল, মনিয়ারা সুগার কমে মারা গেছেন। সকালে খবর পেয়ে মনিয়ারার বাবা সবার আগে সেখানে যান। পরে অন্য স্বজনেরা গিয়ে দেখেন, কয়েকজন লোক মনিয়ারার বাবাকে নিয়ে বৈঠক করছেন। এ সময় তাঁরা মনিয়ারার ছেলেমেয়েকে ১২ শতক জমি লিখে দেওয়া ও দাফনের খরচ দেওয়ার কথা বললে সন্দেহ হয়।
এরপর মনিয়ারার লাশ গোসল করাতে নেওয়া হলে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় মারধরের চিহ্ন ও গলায় দড়ি পেঁচানোর মতো দাগ দেখা যায়। সন্দেহ হলে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে স্থানীয় লোকজন ও মনিয়ারার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের কাছ থেকে জানা যায়, জুলফিকার দুদিন ধরে মনিয়ারাকে মারধর করেছে এবং কোনো খাবার খেতে দেয়নি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন