[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

পদ হারানোর পর মুনতাসিরের অভিযোগ উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাইয়ের বিরুদ্ধে

প্রকাশঃ
অ+ অ-
মুনতাসির মাহমুদকে দলের দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির | ছবি: মুনতাসির মাহমুদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি তুলে মগবাজারে বিক্ষোভ করেছিলেন মুনতাসির মাহমুদ। বিক্ষোভের পরই তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠকের পদ হারান। পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্টে তাঁর চাকরিও বাতিল হয়। এরপর মুনতাসির ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলমকে দোষারোপ করছেন। মাহবুব দাবি করেছেন, মুনতাসির তাঁকে জড়িয়ে মনগড়া কথা বলছেন।

রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলে রোববার দুপুরে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ করেন মুনতাসির। এরপর সন্ধ্যায়ই এনসিপি তাঁকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর মুনতাসির রেড ক্রিসেন্টে উপপরিচালক পদে নিয়োগ পান। আর উপদেষ্টা মাহফুজের ভাই মাহবুব রেড ক্রিসেন্টের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রেড ক্রিসেন্টে মুনতাসির মাহমুদের চাকরিটি ছিল অস্থায়ী। কয়েক দিন ধরে তিনি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন। এনসিপি নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরও গতকাল তিনি বিক্ষোভ চালান। ওই দিন রেড ক্রিসেন্টের বোর্ড সভায় তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রেড ক্রিসেন্টে মুনতাসির মাহমুদের চাকরিটি ছিল অস্থায়ী। কয়েক দিন ধরে তিনি সংস্থাটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন। এনসিপির নিষেধ শুনছিলেন না। এরপর রেড ক্রিসেন্ট তাঁকে চাকরিচ্যুত করে, এনসিপি দেয় অব্যাহতি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, বোর্ড সভায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলমও ছিলেন। সভার পর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে বের হওয়ার সময় তাঁকে মুনতাসির মাহমুদের অনুসারীরা আটকে রাখে। কয়েকজন এনসিপির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মুনতাসিরকে ফোন দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করে চলে যেতে অনুরোধ করেন। আন্দোলন বন্ধ না হলেও সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুনতাসিরের অনুসারীরা মাহবুবকে রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয় থেকে বের হতে দেন। তবে সংস্থার চেয়ারম্যান তখনো আটকা থাকেন। পরে পুলিশ এসে মুনতাসিরের অনুসারীদের সরিয়ে দেয়।

সন্ধ্যায় এনসিপি ফেসবুকে মুনতাসিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও অব্যাহতির চিঠি প্রকাশ করে।

মুনতাসিরের অভিযোগ 

রোববার ঘটনার পর রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মুনতাসির কিছু অভিযোগ করেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, উপদেষ্টার ভাই কেন রেড ক্রিসেন্ট চেয়ারম্যানের পাশে দাঁড়ালেন। মুনতাসির বলেন, ‘সে (মাহবুব) আমাকে সরাসরি হুমকি দিয়েছে, 'আমি উপদেষ্টা মাহফুজের ভাই, তুই মুনতাসির কে? তোর চাকরি আমি খেয়ে দিব।” আমি পাল্টা জবাব দেই। তখন সে চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢুকে ওসি ও অন্যান্য পুলিশকে বলে, “আমি উপদেষ্টা মাহফুজের ভাই, আমি বলছি আপনারা এখনই মুনতাসিরকে গ্রেপ্তার করুন এবং বাকি সবাইকে মেরে সরিয়ে দিন।' 

মুনতাসির আরও বলেছেন, পরে মাহবুব তাঁর কাছে ‘মাফ’ চাইলে এবং কিছু প্রতিশ্রুতি দেয়। তিনি লিখেছেন, ‘সে (মাহবুব) প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় যে সে মাহফুজ ভাইকে বোঝাতে যাচ্ছে এবং আজকেই চেয়ারম্যান পদত্যাগ করবে। কিন্তু সে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স আসে। ডিসি আমাকে চাপ দেন এবং পরে পুলিশ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে আমাদের আহত করে। যা-ই হোক, জুলাইয়ের গাদ্দার, ভাই আমার আজ সফল হয়েছে! আসলেই আমার চাকরি খেয়ে দিয়েছে, দল থেকে অব্যাহতি দেয় এবং পুলিশ দিয়ে মার করায়, কত বিশাল ক্ষমতা তার। আমি আমার ভাইয়ের হেদায়েতের জন্য দোয়া করি।’ 

আসলেই আমার চাকরি খেয়ে দিছে, দল থেকে অব্যাহতি দেওয়াইছে এবং পুলিশ দিয়ে মাইর খাওয়াইছে, কত বিশাল ক্ষমতা তার। আমি আমার ভাইয়ের হেদায়েতের জন্য দোয়া করি।
সমুনতাসির মাহমুদ
সোমবার বিকেলে মুনতাসির দুটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) কপিসহ আরেকটি পোস্ট দেন। দুটি জিডিই হাতিরঝিল থানায় করা হয়েছে। দুটি জিডিতেই বাদীর নাম তিনি ঢেকে দিয়েছেন।

এর মধ্যে ৮ অক্টোবর করা জিডিতে ছয় ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাত আরও ১৫–২০ জনের বিরুদ্ধে রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া, গালাগালি ও হুমকির অভিযোগ করা হয়।

৯ অক্টোবর করা অন্য জিডিতে তিন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করা হয়। একজনের বিরুদ্ধে রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর অফিসে এলে তাঁর অনুমতি না নিয়ে আরেকজন গোপনে ভিডিও ধারণ করেন। এসব ঘটনার পর ৭ অক্টোবর হাতিরঝিলের গাবতলা এলাকায় রিকশা চালানোর সময় তাঁকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয়।

এই পোস্টের ক্যাপশনে মুনতাসির লিখেছেন, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা না নিয়ে ভুক্তভোগীদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং পাল্টা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে! জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও তাদের এই সাহস কোথা থেকে এসেছে এবং প্রশাসন কে চালাচ্ছে?’

যোগাযোগ করা হলে এনসিপির নেতা মুনতাসির  বলেন, তাঁর যা বক্তব্য, তা ফেসবুক পোস্টেই আছে।
  
মাহবুব আলম | ছবি: সংগৃহীত
 
উপদেষ্টার ভাই যা বলছেন
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা না থাকলেও ‘বিশেষ বিবেচনায়’ মুনতাসির রেড ক্রিসেন্টের উপপরিচালক পদে চাকরি নিয়েছিলেন। তিনি কয়েক দিন ধরে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। গত শনিবার রাতে মুনতাসির ও এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মাহমুদা মিতু (রেড ক্রিসেন্টের আরেক বোর্ড সদস্য) এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করেন। নাহিদ তাঁদের বলেন, আন্দোলনের পরিবর্তে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কিন্তু মুনতাসির তারপরও বিক্ষোভ চালান।

রোববার রেড ক্রিসেন্টের বোর্ড সভায় মুনতাসিরের আচরণ নিয়ে আলোচনা হয় জানিয়ে মাহবুব আলম বলেন, ‘হঠাৎ বোর্ড সভায় ঢুকে মুনতাসির দুটি জিডির কপি দেখান, যেগুলো নিয়ে আমাদের ধারণা ছিল না। পরে তিনি চলে যান। বোর্ডের বেশির ভাগ সদস্যের সিদ্ধান্তে তাঁকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সভার পর আমার সঙ্গে তাঁর কথা হয়। সেখানে কোনো হুমকি-ধমকি হয়নি। রেড ক্রিসেন্ট থেকে বেরোতে গেলে তাঁর সঙ্গে থাকা ছেলেরা আমার পথরোধ করে আধঘণ্টা আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁরা ৬টা পর্যন্ত আমাকে অফিসে আটকে রাখে। পরে মুনতাসির এসে আমার কাছে ক্ষমা চান।'  
 

অভিযোগ আছে, তিনি (মুনতাসির) রেড ক্রিসেন্টের নিয়মকানুন অনুযায়ী কাজ করেন না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি আমার সমর্থন চেয়েছিলেন। সেটা না করায় তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার নাম জড়িয়ে মনগড়া কথা বলছেন।

— মাহবুব আলম

মাহবুব আলম বলেন, হাতিরঝিল থানার ওসি এবং তেজগাঁও জোনের এসি গতকাল সারাদিন রেড ক্রিসেন্ট কার্যালয়ে ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের ওপর কোনো বল প্রয়োগ করা হয়নি। তবে রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান বিভিন্ন মহলে কথা বলেছেন। পরে রমনার ডিসিও এসেছিলেন। তিনি (মাহবুব) চলে আসার পর বিক্ষোভকারীদের ওপর বল প্রয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় তার কোনো ভূমিকা নেই।

কিছুই না করেও মুনতাসির কেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, এমন প্রশ্নে মাহবুব বলেন, ‘অভিযোগ আছে, মুনতাসির রেড ক্রিসেন্টের নিয়মকানুন মেনে কাজ করেন না। বিভিন্ন সময়ে তিনি আমার সমর্থন চেয়েছিলেন। আমি সেটা না করায় তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার নাম জড়িয়ে মনগড়া কথা বলছেন। তাঁর চাকরি চলে যাওয়ার বিষয়ে আমার কোনো হাত নেই। গতকালের ঘটনার সময় এনসিপির শৃঙ্খলা কমিটি, স্বাস্থ্য সেলসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে মুনতাসিরকে ফোন করে আন্দোলন থামাতে বলা হয়। তিনি কারও কথা শোনেননি। পরে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আমার কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। আমি তাকে কোনো হুমকিও দেইনি।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন