[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

মৌলভীবাজারে ভোরে জমজমাট হাটের ব্যস্ততা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
হাটে পুঁইশাক নিয়ে এসেছেন এক বিক্রেতা। সোমবার সকালে মৌলভীবাজার শহরের বেরিরপাড়ে সবজির আড়তে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

মৌলভীবাজার শহর তখনো পুরোপুরি জেগে ওঠেনি। এর মধ্যে শহরের একটি অংশে কুয়াশার চাদর পড়ে আছে। রাত জাগার ক্লান্তি কাটিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন একদল মানুষ। তাঁদের চলাফেরায় স্থানটি ধীরে ধীরে সরগরম হয়ে উঠছে। ছোট-বড় গাড়ি আসছে, মালামাল ওঠানো-নামানো হচ্ছে।

এ দৃশ্য দেখা গেল শহরের পশ্চিমবাজারের বেরিরপাড়ে সবজির আড়তে। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা ধরনের মৌসুমি ও আগাম সবজি আসে। এছাড়া স্থানীয় কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তারা সরাসরি শাকসবজি নিয়ে আসেন বিক্রি করতে। দুই থেকে তিন ঘণ্টার এই হাট তখন কথার আওয়াজ, ছুটে চলা ও পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে।

সোমবার সকাল সাড়ে ছয়টায় বেরিরপাড়ের আড়তে গিয়ে দেখা গেল, তখনো স্থানটি পুরো জমে ওঠেনি। ফেরিওয়ালাদের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের বেশির ভাগই খালি। কেউ হাতে খালি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে, কেউ দিক-দিক খোঁজ নিচ্ছেন, দাম-দর জানার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বেলা কিছুটা এগোতেই স্থানটি অনেক মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যানসহ ছোট-বড় গাড়ি এসে ভিড় করতে থাকে। শ্রমিকেরা সবজির বস্তা ও টুকরি নামাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।

বিক্রেতাদের মধ্যে আছেন সরাসরি কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা। আছেন পাইকারও, যারা কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন, প্রতি পাল্লায় পাঁচ কেজি করে। এর নিচে বিক্রি করা হয় না। ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে বিক্রি করবেন, আছেন শহরতলির হাটের খুচরা বিক্রেতারাও। মুহূর্তেই স্থানটি জমে ওঠে।

বস্তাভর্তি লাউ–কুমড়া। সোমবার সকালে মৌলভীবাজার শহরের বেরিরপাড়ে সবজির আড়তে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

শাকসবজি ও বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেউ বস্তায় ভরছেন, কেউ ভ্যানের মধ্যে সাজাচ্ছেন। কেউ রিকশা বা ভ্যান ভাড়া করে পণ্য নিয়ে গন্তব্যের দিকে চলে যাচ্ছেন। নতুন আসা কোনো পণ্য খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আড়তে যতক্ষণ মালামাল বেচাকেনা চলছে, ততক্ষণ কিছু ভ্রাম্যমাণ চা-স্টল ও ছোলা-আখনির দোকানও বসে থাকে।

কিশোরগঞ্জের ফারুক মিয়া প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে মৌলভীবাজার শহরে ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন। পাইকারি দরে কেনা সবজি ভ্যান সাজানোর সময় তিনি বলেন, ‘আমি হেঁটে হেঁটে সবজি বেচি। তবে এখন সবজির অনেক দাম। বেচতে অনেক কষ্ট হয়।’

মৌলভীবাজার শহরতলির বর্ষিজোড়ার মনোয়ার হোসেন জলপাই নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে আড়তে বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করেছেন। আজ শুধু জলপাই নিয়ে এসেছেন। পাইকারি ৫০ টাকা কেজি দরে জলপাই বিক্রি করছেন। গ্রামের বিভিন্নজনের কাছ থেকে ৮-১০টি গাছের জলপাই কিনে তিনি আড়তে বিক্রি করছেন।

এক কৃষি-উদ্যোক্তা হাটে আগাম টমেটো নিয়ে এসেছেন। সোমবার সকালে মৌলভীবাজার শহরের বেরিরপাড়ে সবজির আড়তে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

কৃষি উদ্যোক্তা আরিফ নূর টমেটো ও শসা নিয়ে বসে ছিলেন। তিনি গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছেন, যা আগাম বাজারে এসেছে। তিনি বলেন, প্রতি কেজি টমেটোর দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।

কাঁচা মরিচ ও লেবু বিক্রেতা শুকুর আলী জানান, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই আড়তে ব্যবসা করছেন। আগের রাত আটটা-নয়টা থেকে ট্রাকে করে ঢাকা, বগুড়া, শায়েস্তাগঞ্জ, সিলেট, শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মৌসুমিসহ নানা শাকসবজি আনা শুরু হয়। সকাল পাঁচ-ছয়টার দিকে স্থানীয় কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা ও পাইকারেরা মালামাল নিয়ে আসে এবং কেনাবেচা শুরু করে। সকাল আটটার মধ্যে পাইকারি মালামাল বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি বাড়ে। সকাল আটটার পর বাজার আগেই ভিড় কমতে থাকে। খুচরা বিক্রেতারা অন্য হাট বা গলিপথের দিকে চলে যান। আড়তও দ্রুত ফাঁকা হয়ে যায়।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন