গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ, বিরামপুরে বিজিবির ১২ সদস্য প্রত্যাহার
![]() |
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধরের ঘটনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে। এতে নারী-শিশুসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ঘটনার পর বিজিবির ১২ সদস্যকে প্রত্যাহার করে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিরামপুর উপজেলার দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামে বিজিবির জয়পুরহাট ২০ ব্যাটালিয়নের দাউদপুর বিওপির সদস্যদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল মাগরিবের নামাজের পর দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন আতিয়ার রহমান (২২) তাঁর প্রতিবেশী আমিনুল ইসলামকে (১৮) নিয়ে গ্রাম-সংলগ্ন বিল থেকে নিজের খামারের হাঁস আনতে যান। পথে বাংলাদেশ-ভারতের ২৯০/২৭ নম্বর সীমানাপিলার থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে তাঁদের দুজনকে আটক করে বিজিবি। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
আতিয়ার ও আমিনুল জানান, তাঁরা বিলে হাঁস আনতে গিয়েছিলেন। এরপর আতিয়ারকে টহল পোস্টে নিয়ে গিয়ে দাউদপুর ক্যাম্পের নায়েকসহ কয়েকজন বিজিবি সদস্য তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। আতিয়ারের চিৎকার শুনে টহল পোস্ট-সংলগ্ন বাড়ি থেকে তাঁর মা রাবেয়া বেগম গিয়ে ছেলেকে মারধরের প্রতিবাদ করেন। এ সময় তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
পরে গ্রামবাসী গিয়ে আতিয়ার ও তাঁর মাকে মারধরের ঘটনায় বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিজিবির টহল পোস্টে ভাঙচুর করা হয়। পরে গ্রামবাসী আতিয়ার, তাঁর মা রাবেয়া ও আমিনুলকে বিজিবির কাছ থেকে উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী কয়েকজন বলেন, ওই ঘটনার প্রায় আধা ঘণ্টা পর দাউদপুর বিওপির ১৫ থেকে ১৭ জন বিজিবি সদস্য গ্রামে এসে নারী-শিশুসহ গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হন। তাঁরা প্লাস্টিকের পাইপ ও গাছের ডাল দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা মইনুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে বিজিবির সদস্যরা তাঁকে মারতে তেড়ে আসেন। বাধা দিলে ইউপি সদস্যের স্ত্রীকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এতে ছয় শিশুসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন।
আহত জফেলা বেগম (৬২) বলেন, ‘সন্ধ্যাবেলা আমি বাড়িতে রান্না করছিলাম। বিজিবি বাড়িতে এসে আমাকে মেরেছে। আমি কাউকে কিছু বলিনি। আমি কিছু খারাপ করিনি। বিজিবি আমার বাড়িতে এসে লাঠি দিয়ে মারছে, আমার হাত ভাঙে দিয়েছে। তারা কেন আমাকে মারছে?’
স্থানীয় বাসিন্দা জোসনা বেগম বলেন, আতিয়ারকে বিজিবি ধরে নিয়ে টহল পোস্টে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে গ্রামের তরুণরা তাঁকে নিয়ে আসে। এরপর তিনি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন বিজিবি সদস্যরা ধাওয়া করে বাড়িতে ঢুকে কাঁচা কঞ্চি দিয়ে মারতে শুরু করেন। এতে তাঁর শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়।
জানতে চাইলে দাউদপুর বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার তাইফুর রহমান বলেন, বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি ঘটেছিল। পরে বিজিবির জয়পুরহাট ২০ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। পরে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়। এই ঘটনায় ১২ জন বিজিবি সদস্যকে শুক্রবার সকালে দাউদপুর বিওপি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন