{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

‘কায় জানে বাবার সাথে ওইটাই মোর শেষ খাওয়া’

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নিহত হাবিব ইসলাম | ছবি: সংগৃহীত

বাবা দুলাল হোসেন (৬০) ও ছেলে হাবিব ইসলাম (২১) গতকাল সোমবার একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছেন। খাওয়ার পর ছেলে চলে যান বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে উত্তরা ইপিজেডে। বাবা বিছানায়।

ইপিজেডের ভেতরে ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন হাবিব। সকালে যখন তাঁর বাড়িতে ফেরার কথা, তখন বাড়িতে তাঁর মৃত্যুর খবর এল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন হাবিব ইসলাম।

বাবা দুলাল হোসেন বলেন, ‘ছেলেটা আমার অনেক ভালো ছিল। খেলাধুলা করি সব সময় ফুর্তিতে থাকত। কারও সাথে ঝগড়া-বিবাদ নাই। এই সপ্তায় অর নাইট ডিউটি পইরছে। এই জন্য দিনত ঘুমায় আর সইন্ধ্যা হইলে রাইতের খাবার খায়া ডিউটিত যায়। কাইল সইন্ধ্যাত এক সাথে রাইতের খাবার খাইছি। কায় জানে বাবার সাথে ওইটাই মোর শেষ খাবার হইবে। সকালে উঠি বাইরত বেড়াইতে একজন আসি কইল হাবিব গুলি খাইছে। নীলফামারী হাসপাতালোত যায়া দেখি বাপ মোর নাই।’

আজ মঙ্গলবার সকালে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে কারখানা বন্ধ ও ছাঁটাইয়ের জেরে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে হাবিব ইসলাম নিহত হন। তাঁর বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়ের কাজীরহাট গ্রামে।

আজ বেলা তিনটার দিকে হাবিবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা আহাজারি করছেন। পাড়াপ্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। মা মোর্শেদা খাতুন কিছুক্ষণ পরপর মূর্ছা যাচ্ছেন আর বলছেন, ‘বাবা, তুই কোথায় গেলি, একবার আয়। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব কেমন করে?’

হাবিবের বড় চাচা অহিদুল ইসলাম বলেন, হাবিবেরা তিন ভাই। বড় ভাই মোর্শেদুল বিজিবি সদস্য, মেজ ভাই রাশেদুল মুদিদোকানদার আর সবার ছোট হাবিব। বড় ও মেজ ভাই বিয়ে করে পরিবার নিয়ে পৃথক সংসার। হাবিব তাঁর মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে হাবিব এসএসসি পাস করার পর ইপিজেডে কারখানায় চাকরি নেন। পরিবারটা অনেকটা তাঁর আয়ে নির্ভরশীল। বাবা অসুস্থতার জন্য কাজ করতে পারেন না।

হাবিবের সহকর্মী মিলন ইসলাম বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে কারখানায় কাজ করি। ও আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। গতকাল একসঙ্গে রাতে ডিউটি করে একসঙ্গে বের হলাম। কিন্তু ও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেল। এটা ভাবতে খারাপ লাগছে, আজকের পর থেকে আর কোনো দিন তাঁর সঙ্গে দেখা হবে না।’

হাবিবদের বাড়ির আধা পাকা একটি ঘরের সঙ্গে আরেকটি ঘর করার জন্য ইট দিয়ে গাঁথুনি দেওয়া হয়েছে। ওপরে ফাঁকা। বাবা দুলাল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘ছেলে বলেছিল দুই দিন পর এই ঘরে টিন টাঙ্গাবে। টিন আনিও রাইখছে। ওই ঘর আর হইল না।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন