সব মত ও আদর্শের সঙ্গে মিলে কাজ করার অঙ্গীকার ডাকসুর নতুন ভিপি সাদিক কায়েমের
![]() |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানান ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সহ–সভাপতি সাদিক কায়েম ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ। আজ বুধবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সব মত ও আদর্শের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী ইসলামী ছাত্রশিবিরের আবু সাদিক কায়েম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চমৎকার একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিতের প্রতিজ্ঞা করেছেন।
আজ বুধবার সকালে ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সাদিক কায়েম। এ সময় তাঁর পাশে থাকা ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদও বক্তব্য দেন। তাঁরা দুজনেই এই বিজয়ে কোনো বিজয় শোভাযাত্রা না করার ঘোষণা দেন।
সাদিক কায়েম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আমি ডাকসুর ভিপি হিসেবে আমার পরিচয় দিতে চাই না। আমি বোনের ভাই হিসেবে, ছোট ভাইয়ের বড় ভাই হিসেবে এবং বড় ভাইয়ের স্নেহের ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। বন্ধুর বন্ধু হিসেবে, শিক্ষকের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। শিক্ষার্থীদের যেকোনো সমস্যা, ব্যক্তিগত সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাশে থাকতে চাই।’
সাদিক কায়েম আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধর্মের, যে পথের, যে মতের, যে আদর্শের লোক হোক না কেন, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মাল্টিকালচারাল ইনস্টিটিউট হিসেবে বিনির্মাণ করব। আমাদের প্রতিজ্ঞা, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিণত করব। একজন শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষ থেকে চমৎকার একাডেমিক এনভায়রনমেন্ট এখানে পাবে। গবেষণার পরিবেশ থাকবে। তার আবাসন নিয়ে ভাবতে হবে না। খাদ্যের নিরাপত্তা থাকবে। স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা থাকবে এবং আমাদের নারীদের জন্য একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস আমরা গড়ে তুলব।’
আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে জয়–পরাজয় কিছু নেই । ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বিজয়ী হয়েছে। আমরা স্মরণ করছি জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদকে। যাদের মাধ্যমে আজকে আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি এবং আমরা প্রতিটা ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পেয়েছি। একই সঙ্গে স্মরণ করছি বাংলাদেশের আজাদি আন্দোলনের সকল শহীদদের। বিশেষ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদদের। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আমাদের অগ্রনেতা শহীদ আবরার ফাহাদকে। এর সঙ্গে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নির্যাতনে যতজন শহীদ হয়েছে, সেসব শহীদদের।’
সাদিক কায়েম আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর নেতৃত্বের আমানত রেখেছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর যে আমানত রেখেছে, আমরা এর যথাযথ হক আদায় করব ইনশা আল্লাহ। আমরা কথা দিচ্ছি, আমাদের শিক্ষার্থীদের যে স্বপ্নের ক্যাম্পাস, সেই ক্যাম্পাস বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না। আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব ইনশা আল্লাহ। শিক্ষার্থীদের ভয়েস আমাদের ভয়েস। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা আমাদের প্রত্যাশা।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিষয়ে সাদিক কায়েম বলেন, এখানে যাঁরা প্রার্থী ছিলেন, আমরা সবাই সহযোদ্ধা ছিলাম। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। যাঁরা একসঙ্গে নির্বাচন করেছি, তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের উপদেষ্টা। আমরা আশা করব, তাঁরা আমাদের যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। আমাদের গাইড করবেন, ভুল বিষয় ধরিয়ে দেবেন।’
সাদিক কায়েম আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছিল। সফলতার সঙ্গে আমরা আজাদি পেয়েছি। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগামীর বাংলাদেশ, বাংলাদেশের চমৎকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার বার্তা দেব।’
আজকের সংবাদ সম্মেলনে জিএস পদে বিজয়ী এস এম ফরহাদ বলেন, ‘আমার দিক থেকে ব্যক্তিগত অবজারভেশন হচ্ছে, জিএস হিসেবে বিজয়ী হওয়া নির্বাচিত ব্যক্তি ফরহাদের কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি ফরহাদের কোনো অর্জন না। এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর মতামতের ভিত্তিতে প্রদত্ত আমানতের দায়ভার আমাদের ওপর। মূলত এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর বিজয়। আমার কাছে মনে হয়, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করা, যে আমানত আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেই আমানতের ঘোষণা এটি।’
ফরহাদ আরও বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণ এবং দায়িত্ব পালন থেকে যে কদিন আমরা থাকব, তত দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা শিক্ষার্থী আমার জন্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন। আমি যদি আমার পথচলায় কোনো ভুল করি, কোনো ভুল পথে পা বাড়াই, কোনো ভুল কিছু করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন সঙ্গে সঙ্গে তা শুধরে দেন। এবং তাঁর জায়গা থেকে সমালোচনার কাঠগড়ায় আমাদের দাঁড় করান।’
ফরহাদ বলেন, ‘কোনো বিজয় মিছিল এবং আনুষ্ঠানিক কোনো বিজয় র্যালির মাধ্যমে এই বিজয় প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। আমাদের আনন্দের পালা নয়, বরং আমাদের পরীক্ষার পালা।’
ডাকসু নির্বাচনে সাদিক কায়েম ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। জিএস পদে ছাত্রশিবিরের নেতা এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল নেতা তানভীর বারী হামিম পেয়েছেন ৫ হাজার ২৮৩ ভোট। এ ছাড়া প্রতিরোধ পর্ষদের মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট। এজিএস পদে ছাত্রশিবিরের নেতা মুহা. মহিউদ্দীন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের এজিএস প্রার্থী আশরেফা খাতুন পেয়েছেন ৯০০ ভোট।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন