উত্তাল ভাঙ্গা বিকেলে শান্ত, উপজেলা পরিষদের প্রায় সব কক্ষে ভাঙচুর
![]() |
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের চেয়ার-টেবিল, শোকেস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে জানালার কাচ। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে দুপুরের সহিংস পরিস্থিতি বেলা তিনটার পর কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। আড়াইটা পর্যন্ত ভাঙ্গা গোলচত্বর ও আশপাশে হাজারো মানুষ অবস্থান করছিলেন। তিনটার পর থেকে ধীরে ধীরে লোকজন ঘরে ফিরে যান। বিকেল নাগাদ গোলচত্বর ফাঁকা হয়ে গেলেও অলিগলিতে এখনো আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
তবে ঢাকা-খুলনা ও ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া হামিরদী বাসস্ট্যান্ড ও নওপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মনসুরাবাদ ও সোয়াদী বাসস্ট্যান্ডে অবরোধকারীরা অবস্থান করছেন। এতে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকা যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
আরও পড়ুন
ভাঙ্গা থানা ও উপজেলা পরিষদে হামলা, ধাওয়া খেয়ে মসজিদে আশ্রয় নিল পুলিশ
বিস্তারিত পড়ুনআজ বেলা পৌনে একটা থেকে সোয়া একটার মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা চালানো হয়। অফিসার্স ক্লাব–সংলগ্ন গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়; তাঁদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়।
![]() |
হামলাকারীরা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রায় প্রতিটি কক্ষে ভাঙচুর করে। কার্যালয়ের কর্মীরা প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করছিলেন। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙ্গা থানার সামনে অন্তত চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুরোনো থানার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কমপ্লেক্সে ঘটেছে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ। মিলনায়তনের চেয়ার-টেবিল, শোকেস গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে জানালার কাচ। উপজেলা পরিষদের পুরোনো ভবনের নিচতলার সব কার্যালয় ও নতুন তিনতলা ভবনের বিভিন্ন কক্ষেও হামলা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনে একাধিক মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসার্স ক্লাব–সংলগ্ন গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্লাবের এসি, লুট হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল বর্তমানে ভাঙ্গা থানায় অবস্থান করছেন। আজকের ঘটনা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। থানার ওসি, সার্কেল এএসপির সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
![]() |
উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের ভেতরে থাকা দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান বিকেলে বলেন, ‘জনগণ ঘরে ফিরে গেছে। মহাসড়ক বন্ধ আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রহরী মো. সামসু বলেন, তিনি হামলার সময় দোতলায় ইউএনও কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় শত শত লোক উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করে। তার আগে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। যেসব অফিস খোলা ছিল, প্রতিটিতে ভাঙচুর চালায়। তবে যেসব কক্ষ বন্ধ ছিল সেগুলো ভাঙার চেষ্টা করেনি। কাউকে মারধরও করেনি।
![]() |
ভাঙচুরের পর একটি কক্ষ। আজ সোমবার বেলা তিনটার দিকে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস সহকারী মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘পৌনে একটার দিকে এই হামলা শুরু হয়। উপজেলা পরিষদের পূর্ব দিক থেকে চিৎকার করতে করতে সহস্রাধিক লোক ভেতরে প্রবেশ করে। পরিস্থিতি দেখে আমরা দ্রুত আত্মরক্ষার জন্য অফিস থেকে বের হয়ে যাই। বেলা পৌনে দুইটার দিকে ফিরে এসে দেখি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র।’
এর আগে আজ বেলা ১১টা থেকে ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় আন্দোলনকারীরা সড়কের পাশে অবস্থান নেন। তবে বেলা ১১টার দিকে তাঁরা ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দুটি স্থানে অবরোধ শুরু করেন। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
![]() |
উপজেলা কমপ্লেক্সে ঘটেছে সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়েছে। এর পর থেকে ভাঙ্গায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল রোববার থেকে তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন স্থানীয় জনতা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন