[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ভুল ঠিকানার কারণে ছয় বছর কারাবাস, অবশেষে ভারতে ফিরলেন রামদেব মাহাতো

প্রকাশঃ
অ+ অ-

সাড়ে ছয় বছর কারাবাসের পর নিজ দেশে ফিরছেন ভারতীয় নাগরিক রামদেব মাহাতো। সোমবার বেলা ১১টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা কারাগারের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড হয় ভারতীয় নাগরিক রামদেব মাহাতোর (৬০)। কিন্তু ভুল তথ্যের কারণে তাঁকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। কারাগারে থাকতে হয় আরও ছয় বছর। অবশেষে তাঁকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে সোনামসজিদ সীমান্ত দিয়ে আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে স্বদেশে পাঠানো হয়।

রামদেব মাহাতো ভারতের বিহার রাজ্যের পশ্চিম চাম্পারণ জেলার মাঝুরিয়া থানার গুদ্রা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁকে হস্তান্তরের সময় তাঁর ছেলে সুনীল মাহাতো (৩৫) ও গ্রাম পঞ্চায়েতপ্রধান লাল বাচ্চা যাদব, বিএসএফ, বিজিবি, দুই দেশের পুলিশ কর্মকর্তা, কারাগারের প্রতিনিধি ও রামদেব মাহাতোকে পাঠাতে সহায়তাকারী শামসুল হুদা (৬০) নামের এক মানবাধিকারকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন রামদেব। তাঁর বিরুদ্ধে সদর থানায় ১৯৫২ সালের কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্টের ৪ ধারায় মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় আদালত তাঁকে ছয় মাসের সাজা দেন। তবে ২০১৯ সালের ২৯ মে সাজা শেষ হলেও সঠিক ঠিকানা না থাকায় প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি। ফলে বিনা অপরাধেই ছয় বছরের বেশি সময় কারাগারে বন্দি থাকতে হয় তাঁকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাধ্যক্ষ জাকির হোসেন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া রামদেব মাহাতোর সঠিক পদবি ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ না হওয়ার কারণে তাঁকে সময়মতো পাঠানো যায়নি। জাকির হোসেন বলেন, এমন জটিলতার কারণে আরও কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁদের পরিবারের সন্ধান না মেলায় ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।

মানবাধিকারকর্মী শামসুল হুদা বলেন, ‘২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে রামদেব মাহাতোর কথা জানতে পারি। প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর পরিচয় উদ্ধার করে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসকে জানাই। রামদেবের গ্রাম পঞ্চায়েতকে ছবি পাঠিয়ে নিশ্চিত করি। তাঁর ছেলে সুনীলের সঙ্গে কথা বলি। সুনীল জানান, তাঁর বাবা বাংলাদেশের কারাগারে আছেন, সেটা জানা ছিল না। তাঁর ধারণা ছিল, বাবা বোধ হয় মারা গেছেন। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।’

শামসুল হুদার ভাষ্য, বাংলা ছাড়া ভিন্নভাষী নাগরিকদের আটকের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আটক ব্যক্তির তথ্য–উপাত্ত লিপিবদ্ধের বিষয়ে যত্নশীল হওয়া দরকার। মানসিক ভারসাম্যহীন হলে বা ভাষা বুঝতে না পারলে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সহায়তা নেওয়া দরকার। সাজাভোগের পরও একজন ব্যক্তি প্রায় সাড়ে ছয় বছর কারাভোগ করলেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেন। এর দায় এড়াতে পারেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সবকিছু জানার পরও প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রতার জন্য সাত মাস লাগল রামদেবকে পাঠাতে।

দীর্ঘ জটিলতার পরও রামদেবকে তাঁর দেশে পাঠাতে পেরে খুব ভালো লাগছে বলে উল্লেখ করে শামসুল হুদা জানান, গত চার বছরে তিনি এমন ১০ থেকে ১২ জন ভারতীয় নাগরিককে কারাগার থেকে মুক্ত করে ভারতে পাঠিয়েছেন। পাচার হওয়া চারজন বাংলাদেশি নারীকে দেশে এনেছেন। মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে তিনি এ ধরনের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে কাজ করে আসছেন।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন