গোমতীর চরে আগাম মুলার ভালো ফলন, দেশজুড়ে বাজারে সরবরাহ
![]() |
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকায় গোমতী নদীর চরে আগাম মুলার চাষ করা হয়েছে। ভালো ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। ছবিটি গত মঙ্গলবারের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গোমতী নদীর কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভান্তির চরের দৃশ্যটা এখন অনেকটাই ভিন্ন। চরে ঢুকতেই চোখে পড়ে সাদা মুলা। কোথাও মুলা তুলে জমিতে রাখা হয়েছে, আবার কোথাও রাখা হয়েছে স্তূপ করে। শীতের সবজি মুলার আগাম চাষে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকেরা দারুণ খুশি।
গত মঙ্গলবার সকালে ভান্তি গ্রামে গোমতী নদীর চরে গিয়ে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত মুলা তোলার কাজে। কেউ জমি থেকে তোলা মুলা গোছানোর কাজ করছেন। আবার কেউ পরিষ্কার করে আঁটি বেঁধে বাজারে পাঠানোর কাজে ব্যস্ত। এ বছর চরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চাষ হয় মুলার। কেউ কেউ এরই মধ্যে মুলা বিক্রি করে জমিতে লাগিয়েছেন মিষ্টিকুমড়া।
![]() |
গোমতী নদীর চরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ বছের মুলার আবাদ হয়েছে। ছবিটি গত মঙ্গলবার তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
স্থানীয় কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, বর্ষা শেষে শরৎকালের শুরুতেই মুলার বীজ বুনেছেন তিনি। এখনো শীতের অনেক দেরি। এরই মধ্যে মুলা তোলা শুরু হয়েছে। পাইকারেরা খেত থেকে মুলা কিনে নিচ্ছেন। প্রতি কেজি মুলা জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকদের ভালো লাভ হচ্ছে। মৌসুমে ৫ থেকে ১০ টাকার বেশি দামে মুলা বিক্রি করা যায় না।
মনির হোসেন নামের আরেক কৃষক বলেন, বেশির ভাগ কৃষকই পুরো জমির ফলন পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এরপর পাইকারেরা তাঁদের লোক দিয়ে মুলা তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। তিনি ২৪ শতাংশ জমির মুলা ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছে। চরের এই মুলা কুমিল্লার নিমসার বাজার হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
![]() |
খেত থেকে মুলা তুলে পরিষ্কার করে মাঠের পাশে সাজিয়ে রাখা হয়। ছবিটি গত মঙ্গলবারের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সরেজমিনে দেখা গেছে, শুধু ভান্তির চর নয়; পাশের বালিখাড়া, কাহেতরা এলাকায়ও গোমতীর চরে মুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে যেসব জমিতে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো ছিল না, সেসব জমির ফলন সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভান্তির চরে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিতে দেখা গেছে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানাকে। তিনি উপজেলার ঘোলনল ইউনিয়নের ১ নম্বর ব্লকে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি সরতে না পারার কারণে কয়েকটি জমিতে মুলার ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এ জন্য তাঁদের দ্রুত মুলা তোলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। না হলে মুলার নিচের অংশে পচন ধরবে। দ্রুত তুলে বিক্রি করে ফেললে কয়েক দিনের মধ্যে আবারও মুলা লাগানো যাবে।
![]() |
পাইকারেরা খেত থেকে মুলা কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি মুলা জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছবিটি গত মঙ্গলবার তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জাকির হোসেন নামের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা পুরা জমির মুলাখেত চুক্তি কিনতাছি। ভান্তির চরে ৪৪ শতাংশ জমির মুলা কিনছি দেড় লাখ দিয়া। দিনাজপুর ও রংপুর থাইক্কা লোক আনছি মুলা তোলার লাইগ্যা। তাঁরার বেতন ডেইলি এক হাজার। সব খরচ বাদ দিয়া কত লাভ হইবো কইতাম পারি না। বৃষ্টিত আবার কিছু মুলার ক্ষতিও হইছে। তবে বাজারে অহন দামডা ভালা। আশা করতাছি ভালাই লাভ হইব।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সহকারী উপপরিচালক শেখ আজিজুর রহমান বলেন, মৌসুমের শুরুতে দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা কৃষকদের পরামর্শসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছে। শীতের আগে মুলা ছাড়াও আরও অনেক শাকবসবজি পর্যায়ক্রমে চাষ করবেন চরের কৃষকেরা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন