{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন জরুরি, ফলাফলও সবার মেনে নেওয়া উচিত: মুনির সাতোরি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মুনির সাতোরি | ছবি: উইকিপিডিয়া
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মুনির সাতোরি | ছবি: উইকিপিডিয়া

বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এর ফলাফল সবাইকে সম্মান করতে হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ সফর শেষ করার আগে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো বলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মুনির সাতোরি।

এই সফরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ইসাবেল উইসেলার-লিমা, আরকাদিউস মুলারচিক, উরমাস পায়েত এবং ক্যাটারিনা ভিয়েরা।

সাতোরি বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন কেবল একটি ধাপ মাত্র। সব রাজনৈতিক অংশীদারেরা যেন ঐকমত্য তৈরি হওয়া সংস্কারগুলোকে সমর্থন করে। সেই সঙ্গে সেগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো–অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্টে (পিসিএ) মানবাধিকার অঙ্গীকারের মান নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে।

মুনির সাতোরি আরও বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তবে মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নই হবে সহযোগিতা গভীর করার প্রধান মাপকাঠি।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক জোরদারের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সুশাসন, মানবাধিকার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম মান বাস্তবায়নের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং এসব বিষয়ে ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করা।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, অতীতের দিকে ফিরে তাকানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে অতীতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণকে সম্মান করা হয়নি, বিচারব্যবস্থা স্বাধীন ছিল না, নাগরিক সমাজ বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও ছিল না। অথচ এসব বিষয় একটি সুস্থ গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার অপরিহার্য নিশ্চয়তা।’

সাতোরি আশা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের পর নতুনভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল যা–ই হোক না কেন, ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে, স্থিতিশীল শাসনব্যবস্থার জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধি জানান, প্রতিবছর তাঁরা (ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটি) বিভিন্ন দেশে একাধিক সফর থাকেন এবং কোন দেশ সফর করবেন, তা নিজেরাই নির্বাচন করেন।

সাতোরি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে এই সময়ে বেছে নিয়েছি দুটি কারণে—দেশটি একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এই পরিবর্তন প্রায় শেষের দিকে। এটি বাংলাদেশ ও এর গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’

এ ছাড়া আগামী কয়েক মাসে ইইউ বাংলাদেশ সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা আরও জোরদার করবে বলেও উল্লেখ করেন সাতোরি। তিনি বলেন, ইইউ যখনই কোনো তৃতীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে বা সম্পর্ক গভীর করে, তখন মানবাধিকার উপকমিটি সে দেশে ভ্রমণ করে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও মৌলিক অধিকারের গুরুত্ব পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ, এসব বিষয়ই ইইউর সঙ্গে কোনো দেশের চুক্তির প্রধান দিক।

গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলটি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
গত বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলটি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সাতোরি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইইউ বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এক বছর পর এসে তাঁরা দেখেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ ও পরিবর্তনে দৃশ্যমান প্রভাব ফেলছে। প্রতিনিধিদল প্রত্যক্ষ করেছে এই প্রক্রিয়া কীভাবে এগোচ্ছে এবং তারা কীভাবে বাংলাদেশকে আরও সমর্থন দিতে পারে, তার পর্যালোচনা করছে।

সফরকালে প্রতিনিধিদলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজের সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করা বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে চলমান সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গেও আলোচনা করেছে।

সাতোরি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এই সংস্কার প্রক্রিয়ার ফলাফল যদি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সমর্থন পায়, তবে এটি দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন সর্বোত্তমভাবে সম্পন্ন হওয়ার নিশ্চয়তা দেবে।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘তবে পরিবর্তন এখনো শেষ হয়নি। এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বাকি আছে, তা হলো নির্বাচন। নির্বাচিত সংসদ অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে সমর্থন ও বাস্তবায়ন করবে কি না, সেটিই আসল প্রশ্ন।’

এদিকে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে নতুন পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো–অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিসিএ) নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে ইইউর অবাধ বাজারসুবিধা ‘এভরিথিং বাট আর্মস’ (ইবিএ)–এর আওতায় রয়েছে, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের উদ্বেগগুলো সমাধানে একটি পদ্ধতিগত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সাতোরি বলেন, পিসিএ হলো ইইউ ও অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কের একটি অপরিহার্য কাঠামো। ইইউ চেষ্টা করে, যাতে এই অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি উভয় পক্ষের জন্য সুফল বয়ে আনে এবং দুই পক্ষের স্বার্থ সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের (মানবাধিকার উপকমিটি) ভূমিকা হলো চুক্তিটি যেন শুধু বাণিজ্যিক বিষয়েই সীমাবদ্ধ না থাকে এবং মানবাধিকার ইস্যুটি যেন চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকে, তা নিশ্চিত করা।’

সাতোরি জানান, আলোচনা চূড়ান্ত হলে চুক্তি অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করার জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে মতামত দিতে আহ্বান জানানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা (মানবাধিকার উপকমিটি) এই চুক্তির মানবাধিকার প্রতিশ্রুতির মান যাচাই করব।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ এই চুক্তি কেবল একটি সরকারের মেয়াদে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ককে আবদ্ধ করবে।

এ জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থ চুক্তিতে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হওয়া এবং এ চুক্তির সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন সাতোরি।

 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন