[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ: ফটক আটকে শিবিরের বিক্ষোভ, প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

প্রকাশঃ
অ+ অ-

এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর অবরোধ সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ বেলা ১১টায় দুই নম্বর গেট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। একই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আজ রোববার সকালে পৃথকভাবে তারা এই কর্মসূচি পালন করে। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সকালে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেলপথ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারী যাওয়ার সড়কটি অবরোধ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা তিনটি দাবি জানান। দাবির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, ঘটনার সূত্রপাতের সিসিটিভি ফুটেজ দেওয়া ও নিরাপত্তাচৌকি বসানো। এ সময় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক ইসহাক ভূঞা বলেন, ‘গতকাল রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় প্রশাসন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ঘুরে চলে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি হামলার শিকার হয়।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘হামলার সময় প্রশাসন কোথায় ছিল? প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য কী নিরাপত্তা দিয়েছে?’

বেলা ১১টার দিকে সেখানে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও প্রক্টর। তাঁরা বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ সংঘর্ষের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল বিষয়টি জানার পর নিরাপত্তাপ্রধান আবদুর রহিম, সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নাজমুল হোসেইনসহ তিনজন নিরাপত্তাকর্মী ঘটনাস্থলে যান। পরে প্রক্টরের গাড়ি স্থানীয় বাসিন্দারা ভেঙে দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য চেয়েও সময়মতো পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন খান বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা প্রক্টরিয়াল বডির কেউ এখন পর্যন্ত ঘুমাইনি। অনেকে বলছে আমাদের শিক্ষার্থীরা কেন (গ্রামের) ভেতরে গিয়েছেন। আমরা দেখলাম, অনেক শিক্ষার্থী সেখানে থাকেন, তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অন্য শিক্ষার্থীরা সেখানে যান। গতকাল আমরা পুলিশের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, আমি নিজে ৩০ বার কল করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা। আমরা কিছুদিন আগে হাটহাজারী থানায় সাহায্য চেয়েছিলাম, তারা বলেছে পর্যাপ্ত বাহিনী নেই। আমরা এই ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানাব।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা মূল ফটকে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।

প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক আটকে ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীদের বিক্ষোভ। আজ সকালে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও ইউপিডিএফ–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রয়েছে। বেলা ১১টার দিকে তাঁরা বিক্ষোভ শেষ করেন।

জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, তাঁরা এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান। পাশাপাশি এ ঘটনায় গাফিলতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করেন তাঁরা।

সড়ক ও রেল অবরোধ

সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করে এর বিচার চেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সকালে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারী যাওয়ার সড়কটি অবরোধ করে রেখেছেন তাঁরা। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট যাওয়ার রেললাইনও অবরোধ করে রাখা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ অবরোধ অব্যাহত রয়েছে।

বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় অনেক দোকানপাট ভাঙা, সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ইটের টুকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির ভাঙচুর হওয়া একটি মাইক্রোবাসও পড়ে রয়েছে।  

গতকাল রাত সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মারধরের পর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সংঘর্ষে অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের কাছে একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি ওই ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে দারোয়ানের সঙ্গে তাঁর তর্ক হয়। একপর্যায়ে ভবনের দারোয়ান তাঁকে মারধর করেন। এ সময় ২ নম্বর গেটে থাকা শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাঁকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর স্থানীয় লোকজন মাইকে ডেকে লোক জড়ো করে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট থেকে হাটহাজারী যাওয়ার সড়কটিতে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখা হয়েছে। আজ দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

এ ঘটনায় অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ২১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার চিহ্ন রয়েছে। অন্যদের লাঠিসোঁটা, কাঠ, ইটপাটকেল ইত্যাদি দিয়ে জখম করা হয়েছে। একসঙ্গে এত আহত শিক্ষার্থী আগে দেখেননি তিনি। তাঁদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন