প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার | ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ আগস্ট ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছিলেন।

তবে ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ কারণে পূর্বনির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন আম্মার। চলতি মাসে এ অনুষ্ঠান করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে সালাউদ্দিন আম্মার এ কথা জানান।

সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, পূর্বনির্ধারিত সময় ৫ আগস্ট তাঁদের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে চলতি মাসেই এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। গণমাধ্যমে ভয়াবহ ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কম সাড়া পাচ্ছেন। তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিশ্রুত আট লাখ টাকার অনুদান বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রোগ্রাম আয়োজনের শুরু থেকেই একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়েছে। সেখানে প্রোগ্রামের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রোগ্রাম শেষে আমরা ভাউচার ও রসিদ কপিসহ আয়-ব্যয়ের হিসাব জানিয়ে দেব।’

চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘জুলাই ৩৬: মুক্তির উৎসব’ নামে একটি কনসার্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেন সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও ‘ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা’ নামের একটি সংগঠনের পরিচালক কে এস কে হৃদয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁরা দুজন ‘অর্গানাইজার-৩৬ জুলাই, মুক্তির উৎসব’ পরিচয় ব্যবহার করে চিঠি পাঠান। তাঁদের এ আবেদনে ‘জোরালো সুপারিশ’ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব।

আবেদনের কয়েকটি অনুলিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেকে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, আবার অনেকে সমালোচনা করছেন। প্রোগ্রাম আয়োজনের কোনো কমিটি না থাকায় আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। গণমাধ্যমে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বিষয়টি নিয়ে অর্থ আত্মসাতের আশঙ্কা করেছেন।

অন্যদিকে আম্মারের পক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভার্সিটি লাইফের ছয়টা বছরের বড় অংশ কাটাইছি ইভেন্টের জন্য স্পনসর খুঁজে। আজ জানলাম সেটাকে নাকি চাঁদাবাজি বলে।’ এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী, সাবেক সমন্বয়ক মাহাইর ইসলামসহ অনেকে দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন।

এ বিষয়ে সমালোচনা শুরুর পর দুই দিন আগে সালাউদ্দিন আম্মার তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘যেহেতু প্রশ্ন উঠেছেই, আমি মেইনস্ট্রিম মিডিয়াকে অনুরোধ জানাব, আপনারা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেন। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মা-বাবার গত ৫ বছরের এবং এই ১ বছরের ব্যাংক ব্যালেন্স খতিয়ে দেখেন। আম্মুর অ্যাকাউন্টে তাঁর শিক্ষিকা হিসেবে পাওয়া বেতনের বাইরে আর কোনো টাকা ঢুকেছে কি না। আমার জানামতে হয়তো আব্বুর কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টই নাই।’

সালাউদ্দিন আম্মার আরও লেখেন, ‘আমার বিকাশ, নগদ অ্যাকাউন্ট আর ইসলামি ব্যাংক স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্টের বাইরে আর কোনো অ্যাকাউন্ট নাই। আমার এলাকাতে আমি কোনো সভা করি নাই, রাজনৈতিক প্রভাবেরও যদি কোনো অভিযোগ পান, সেটাও তদন্ত করবেন। আমি চেয়েছিলাম, যদি রাকসু করি তাহলে রাকসুর আগে সম্পদের হিসাব ক্লিয়ার করব; যেহেতু কোটিপতি হওয়ার সুযোগ ছিল। সেটা করার সুযোগ পেয়েছি।’