প্রতিনিধি যশোর
![]() |
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যশোরে একই সময়ে পাশাপাশি স্থানে বিজয় মিছিল ও সমাবেশ করে ‘শক্তির মহড়া’ দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যশোরে একই সময়ে পাশাপাশি স্থানে বিজয় মিছিল ও সমাবেশ করে ‘শক্তির মহড়া’ দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দুই দলই লোকসমাগম ঘটিয়ে দুটি বড় মিছিল নিয়ে শহরের দুই দিকে যায়। এতে সড়কে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়ে ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষ।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ-সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট মোড়ে সমাবেশ করে বিজয় মিছিল নিয়ে মনিহার প্রেক্ষাগৃহের দিকে যায় জামায়াত। ঈদগাহ মাঠের উল্টো পাশে টাউন হল মাঠে সমাবেশ করে বিজয় মিছিল নিয়ে পালবাড়ি মোড়ের দিকে যায় বিএনপি। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এতে সকাল ১০টা থেকে শহরের দড়াটানা, চিত্রা মোড়, ঈদগাহ মোড়, চৌরাস্তা, কোর্ট মোড়সহ গোটা শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
দুটি সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে মিছিল-স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রাজপথ। গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উৎসবে একই সময়ে পাশাপাশি স্থানে দুটি দলের নেতা-কর্মীদের এ সমাগমকে নিজেদের ‘শক্তির মহড়া’ মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।
তবে জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, এটা শক্তির মহড়া নয়। একই সময়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পড়ে যাওয়ায় দৃশ্যত এমনটা মনে হচ্ছে। তাঁরা বিএনপির নেতাদের কাছে তাঁদের অনুষ্ঠান কখন জানতে চেয়েছিলেন। বিএনপি নেতারা বিকেলের কথা বলেছিলেন। এ জন্য তাঁরা দুপুর ১২টায় তাঁদের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, বিএনপিও দুপুরে একই সময়ে কর্মসূচি পালন করেছে। তাঁদের (জামায়াত) কর্মসূচিতে সদর, মনিরামপুর, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা থেকে প্রায় ২০ হাজার নেতা-কর্মী যোগ দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘৫ ও ৬ আগস্ট অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্যে আগেই টাউন হল মাঠ বরাদ্দ নিয়ে রাখা হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ দুপুর ১২টায় আমরা বিজয় মিছিল করেছি। জামায়াতের নেতারা আমাদের দলীয় কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা বিষয়টি তাঁদের আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তারপরও তাঁরা আমাদের ঘোষিত সময়েই কর্মসূচি পালন করেছেন, যে কারণে বিজয় মিছিল নিয়ে আমাদের শহরের পালবাড়ির দিকে যেতে হয়েছে।’
সদর উপজেলা ও শহর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। শহর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, যশোর চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য দেন। পরে অনিন্দ্য ইসলামের নেতৃত্বে ঈদগাহ মাঠ থেকে বিজয় মিছিল বের হয়ে শহরের দড়াটানা মোড় ঘুরে পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে পথসভার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
পথসভায় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত বিজয় এখনো বাকি আছে। যে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। হাজার হাজার নেতা-কর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে; সেই গণতন্ত্র পুরোপুরি আসতে একটি অবাধ সুষ্ঠু ভোটের দরকার। ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে।’
এদিকে শহরের জিরো পয়েন্ট মোড়ে গণসমাবেশ করে জেলা জামায়াত। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও কুষ্টিয়া-যশোর অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসেন। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘যারা জুলাই–আগস্টের চেতনা ধারণ করতে চায় না, তাঁদের মধ্যে ফ্যাসিস্টের পদধ্বনি শোনা যায়। সরকার এখনো জুলাই যোদ্ধাদের জন্য তেমন কিছু করেনি, যা পীড়াদায়ক। জামায়াত একটি মানবিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর এটি কেবল বক্তব্য-মিছিল দিয়ে হবে না। কাজের মাধ্যমে করতে হবে।’
জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তৃতা দেন কুষ্টিয়া যশোর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আজীজুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবু জাফর সিদ্দিকী, সহকারী সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দুস, যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী গাজী এনামুল হক, যশোর-৩ (সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী আবদুল কাদের, যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোক্তার আলী, শহর শাখার আমির অধ্যাপক শামছুজ্জামান, সদর উপজেলার আমির অধ্যাপক আশরাফ আলী প্রমুখ। গণসমাবেশ শেষে বিজয় মিছিল বের করা হয়।