{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

তিস্তার ওপর নির্মিত সেতুর নাম দেওয়া হলো ‘মওলানা ভাসানী সেতু’

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেতুটির উদ্বোধন হওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। হাসি ফুটেছে দুইপাড়ের মানুষের মুখে।
প্রকাশঃ
অ+ অ-

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গাইবান্ধা প্রান্তে সেতুটি উদ্বোধন করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর সংযোগকারী তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ১,৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের তৃতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নাম দেওয়া হলো 'মওলানা ভাসানী সেতু'।

বুধবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ উপলক্ষে হরিপুর প্রান্তে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দুপুর ১টায় সেতুর উদ্বোধন করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গাড়িতে চড়ে সেতু পাড়ি দিয়ে চিলমারী অংশে যান। এ সময় উচ্ছ্বসিত লোকজন কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ গাড়িতে, কেউ বাইসাইকেলে, কেউ ইজিবাইকে চড়ে, আবার কেউ পায়ে হেঁটে সেতু পাড়ি দেন। সেতু দেখতে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন।

এ সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। আর সংযোগ সড়ক, নদীশাসন, কালভার্ট ও জমি অধিগ্রহণে খরচ হয়েছে আরও ৩৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তিস্তা নদীর বুকে এটি তৃতীয় সড়ক সেতু এবং এটিই সবচেয়ে বড়।

উৎসুক জনতা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই গাইবান্ধা প্রান্ত থেকে পায়ে হেঁটে ও মোটরসাইকেলে সেতু পার হচ্ছেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এই সেতুটি কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন ছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেতুটির উদ্বোধন হওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। হাসি ফুটেছে দুইপাড়ের মানুষের মুখে।

হরিপুর এলাকার কলেজশিক্ষক প্রভাত চন্দ্র পাল জানান, 'সেতুটির নাম "মওলানা ভাসানী সেতু" দেওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। একজন বিখ্যাত মানুষের নামে সেতুটি হওয়ায় আমরা গর্বিত।' তিনি বলেন, 'এই সেতু হয়ে উঠবে তিস্তাপাড়ের মানুষের যোগাযোগ, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন।'

একই এলাকার স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, 'আমরা জানতাম সেতুটি "চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতু" নামে চালু হবে। আগে থেকে এ ধরনের প্রচারণা ছিল। কিন্তু সেতুটি উদ্বোধন হলো মওলানা ভাসানী সেতু নামে।'

এলজিইডি সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) ও ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)-এর যৌথ অর্থায়নে এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। শুরুতে ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, নানা কারণে পাঁচবার সময়সীমা পিছিয়ে অবশেষে আক সেতুটি খুলে দেওয়া হয়।

সেতুটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ২৯০টি পাইল, ৩০টি পিলার, ২৮টি স্প্যান এবং ১৫৫টি গার্ডার। উভয় প্রান্তে পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১২টি ব্রিজ ও ৫৮টি বক্স কালভার্ট। পাশাপাশি ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে নদীশাসনসহ মোট ৫৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রথম তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মিত হয় ২০১২ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা এলাকায়। এর দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার এবং ব্যয় হয়েছিল ৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয়টি নির্মিত হয় ২০১৮ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে, যার দৈর্ঘ্য ৮৫০ মিটার এবং ব্যয় হয়েছিল ১৩১ কোটি টাকা।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে সেতুটি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির নাম 'মওলানা ভাসানী সেতু' দেওয়া হয়েছে। এই নাম সর্বজনগৃহীত। এর মাধ্যমে একজন বরেণ্য ব্যক্তিকে সম্মান জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই সেতু চালু হওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষ খুশি। এটি শুধু একটি অবকাঠামো নির্মাণ নয়, বরং উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্ন, উন্নয়ন ও সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন