পরিবর্তন কেবল পরিবর্তনের জন্য নয়, কোনটা বিভেদ, খেয়াল রাখতে হবে: মঈন খান
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, কসমেটিক পরিবর্তন দিয়ে বাংলাদেশের আঠারো কোটি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব নয়। প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য প্রথমে মানুষের অন্তরের পরিবর্তন দরকার।
আজ শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন আবদুল মঈন খান। ‘ফিরে দেখা রক্তঝরা জুলাই আগস্ট প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি’ শীর্ষক কথকতার আয়োজন করে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বলা হচ্ছে সংবিধানের কিছু পরিবর্তন হবে, কিন্তু আমি বলব, পুরো সংবিধান পাল্টে দিলেও যারা সংবিধান তৈরি ও পালন করে, এ দেশের জনগণের অন্তরের পরিবর্তন না হলে কোনো লাভ হবে না। আমরা পরিবর্তন চাই, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, পরিবর্তন কেবল পরিবর্তনের জন্য নয়। কোনটা বিভেদ, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ১৬শ হত্যাকাণ্ডের জন্য ১৬শ মামলা হওয়া উচিত ছিল।’ এ প্রসঙ্গে আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমি আইনজ্ঞ না হয়েও বলছি, যদি ১৬শ মামলা হয়, তাহলে আধুনিক বিচারব্যবস্থায় এসব মামলার বিচার হতে ১৬শ বছর লাগবে। বরং বাংলাদেশে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচারের জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট। আর কোনো সৎ সাহসী সরকার হলে ১৬ ঘণ্টায় এই বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব।’
চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও মানুষের আকাঙ্ক্ষা কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কারের কথা বলছি, আমি প্রশ্ন করতে চাই, যে প্রত্যাশা নিয়ে চব্বিশের জুলাই–আগস্ট এসেছিল, আজকের জুলাই–আগস্টে তার কতটা পূরণ হয়েছে? দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের সময়ে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছিলাম, সেটা কি পূরণ হয়েছে? কেন আমাদের উত্তরণ হয়নি, সেই প্রশ্ন করতে হবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের কথা সবাই বললেও কেউ শহীদদের ধারণ করছে না বলে মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের গল্প অনেকটা একাত্তরের গল্পের মতো হয়ে যাচ্ছে। সবাই বলছে, কিন্তু শহীদদের কেউ ধারণ করছে না। এসব চিহ্ন দেখলে মনে হয়, প্রকৃতপক্ষে নতুন বন্দোবস্ত হচ্ছে না। বরং আমরা পুরোনো ধারায় থেকে যাব। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো শহীদের সঠিক তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল।’
জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে সব মহলে ‘ক্রেডিটবাজি রাজনীতি’ চলছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার, আবেগের ওপর রাজনীতি বেশি দিন টেকে না। সব মহলে শুধু ক্রেডিটবাজি চলছে। বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। জুলাই সনদ দরকার। কিন্তু সবাইকে বাদ দিয়ে যদি মুষ্টিমেয় কাউকে গণ-অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে যথাযথ ন্যায়বিচার করা হবে না।’ জুলাই ঘোষণাপত্রে আন্দোলনের সব অংশগ্রহণকারীকে যুক্ত করতে হবে বলেন জোনায়েদ সাকি।
ফ্যাসিবাদী সময়ের নির্যাতন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সুসংগঠিত করেছিল উল্লেখ করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘যদিও জুলাই পরবর্তী সময়ে আমরা সেই কঠিন সময়ের কথা ভুলে গিয়েছি। এখন সবাই মাস্টারমাইন্ড হতে চায়। তাই বলতে চাই, ইতিহাস থেকে আমাদের বুঝতে হবে। যারা মাস্টারমাইন্ড হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন, ভবিষ্যতে যেন আপনাদের ভিলেন হতে না হয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। চব্বিশের পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দুটি ভুল ছিল উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘কারা সরকারে যুক্ত হবেন এবং কত দিন মেয়াদের হবে, তা আমরা ঠিক করে দিইনি। যার ফলে এক বছর পরেও আমরা চিন্তায় আছি, আদৌ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না।’
নতুন শুল্ক বাণিজ্য চুক্তিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ জন্য কী ধরনের গোপন চুক্তি রয়েছে, সেটা আমরা জানতে পারছি না। সরকারের উচিত তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা।’
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিভিন্ন পেশাজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। কিন্তু জুলাই পরবর্তী সময়ে সেটার স্বীকৃতি হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লেন্স দিয়ে গোটা তরুণসমাজকে দেখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁর উচিত ছিল আন্দোলনে অংশ নেওয়া বৃহৎ তরুণদের সঙ্গে গল্প করা। যেভাবে তিনি বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কথা বলেন।
পুলিশ বাহিনীকে সব সরকারের পেটোয়া বাহিনী বলা হয় উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘কোন সিস্টেম পুলিশকে এই পেটোয়া বাহিনীতে রূপ দেয়? সেটা কেন সংস্কার হচ্ছে না?’
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টির জন্য বছরের পর বছর লেগেছে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার দায়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। শুধু ৩৬ দিনে এই আন্দোলন সংগঠিত হয়নি। তবে আমি জানি না, সত্যিকারভাবে সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কবে হবে, যেখানে মানুষ মানুষ হিসেবে বসবাসের নিশ্চয়তা পাবে। আমি সেই বাংলাদেশের প্রত্যাশা রাখছি।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মীর মোফাজ্জল হোসেন, বহ্নিশিখা জামালী, একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শফিক আহমেদ, অনলাইন ভিডিও নিউজ পোর্টাল চেঞ্জ টিভির সম্পাদক আমিরুল মোমেনীন, বাংলাভিশন টিভির বিশেষ প্রতিনিধি সিকান্দার রিমান প্রমুখ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন