নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

 

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে চিকিৎসাসেবা ও কাউন্সেলিং নিতে আসছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ট্রমা (মানসিক আঘাত) কাটিয়ে উঠতে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করাচ্ছে। অন্যদিকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধপত্র। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা কাউন্সেলিং আর চিকিৎসাসেবা নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পাশাপাশি কিছু উৎসুক লোকজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে যাচ্ছেন। উৎসুক লোকজন মূলত বিমান বিধ্বস্তের জায়গা দেখছেন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের কাছাকাছি এলাকার শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসটিতে আসছেন। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের আজ ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

দুপুর ১২টার দিকে কথা হয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোমিনুল ইসলামের সঙ্গে। সে কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে আসার কারণ জানতে চাইলে মোমিনুল বলে, ‘আজকে শিক্ষকেরা আমাদের ডেকেছেন। জানতে চেয়েছেন, বিমান বিধ্বস্তের পর আমাদের কারও কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না? বিশেষভাবে মানসিক কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না? হয়ে থাকলে কাউন্সেলিং নিতে বলেছেন।’

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফটক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মোমিনুল কাউন্সেলিং নিয়েছে জানিয়ে বলে, ‘বিমান বিধ্বস্তের সময় আমি শ্রেণিকক্ষে ছিলাম। বিস্ফোরণের সময় বাইরে বেরিয়ে চোখের সামনে অনেককে আগুনে পুড়ে যেতে দেখেছি। যারা আমাদের জুনিয়র, ছোট ভাইবোন। তখন তাদের বাঁচাতে আমি পারিনি। তাদের আগুনে পুড়তে দেখা, তাদের জন্য কিছু করতে না পারায় আমার এখনো খারাপ লাগে, কষ্ট পাই।’

১৫ মিনিটের মতো কাউন্সেলিং পেয়েছে বলে জানায় মোমিনুল। কাউন্সেলিংয়ে পাওয়া পরামর্শ সম্পর্কে সে বলেন, ‘আমাকে বলেছে, যেসব কাজ করতে ভালো লাগে, আমি যেন সেগুলো আরও বেশি বেশি করি। আরও বলেছে, খারাপ স্মৃতি না ভেবে ভালো ভালো স্মৃতিগুলো নিয়ে যেন ভাবি। আর আমার বয়সে আমি সেদিন যেটুকু করতে পেরেছি, সেটা যথেষ্ট বলে জানিয়েছে।’

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কথা হয় তুরাগের নলভোগের বাসিন্দা রবিউল হাসানের সঙ্গে। তিনি মোটরসাইকেলে করে মেয়ে হাফসা ইয়াসমিন ও চার বছর বয়সী ছেলে ফারদিনকে সঙ্গে করে ক্যাম্পাসে এসেছেন। তাঁর মেয়ে হাফসা মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। রবিউল হাসান বলেন, মেয়ের শ্রেণিশিক্ষক ডেকেছেন। মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন, কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানার চেষ্টা করবেন। তবে তাঁর মেয়ে ঘটনার আগের দিন ও ঘটনার দিন অসুস্থতার জন্য স্কুলে আসেনি। আর ছেলেকে এমনিতেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।

কাকি ও দাদির সঙ্গে ব্যাগপত্র নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসছিল কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী স্রোত সরকার। বেলা ১১টার দিকে প্রধান ফটকের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। সে বলে, আজ দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তির টাকা জমা দিয়েছে। কলেজ ছুটি থাকায় এখন গ্রামের বাড়ি যাবে।

স্রোত সরকার জানায়, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শেষে সে নারায়ণগঞ্জে কাকার বাসায় চলে গিয়েছিল। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা শুনে সেদিন বিকেলে কলেজে আসে। রাতে কলেজের হোস্টেলে ছিল। রাতে কলেজে পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্স আসায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল। পর সকালে তাদের চলে যেতে বলে কর্তৃপক্ষ। তাই আবার কাকার বাসায় চলে গিয়েছিল। আজ ভর্তির টাকা জমা দিয়ে দাদি ও কাকিকে সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে।

গত সোমবার মাইলস্টোনের এই ক্যাম্পাসে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। সেখানে দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবা, পরামর্শ ও ওষুধপত্র দেওয়া হচ্ছে। আর মানসিক আঘাতে (ট্রমা) ভুগছেন, এমন ব্যক্তিদের প্রয়োজন হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচে পাঠানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।