পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে নির্মাণাধীন রাস্তায় বৃষ্টি হলেই জমছে কাদাপানি। মঙ্গলবার বিকেলে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী–অধ্যুষিত গ্রাম চৈতন্যপুর। গ্রামটির ভেতরে একটি পাকা রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন অবহেলিত জনপদটির বাসিন্দারা। এবার সেই রাস্তা নিয়েই বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। রাস্তাটির কাজ ফেলে কয়েক সপ্তাহ ধরে উধাও হয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তাটিতে বৃষ্টি হলেই জমছে কাদাপানি।

গোদাগাড়ী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চৈতন্যপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে ১ হাজার ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। গত পবিত্র কোরবানির ঈদের আগে রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির পর এর ওপর বালু ও রোলার রেখে চলে যান সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ঈদের দুই সপ্তাহ পরও তাঁরা কাজে আসেননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুবিধা হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের ফোন পেয়ে সড়কটির মাঝখান থেকে গাড়ি ও বালু সরানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে নতুন করে কাজ শুরু হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামটির কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ঈদের পর ঠিকাদার আর কাজে হাত দেননি। রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে আর হাঁটাচলা করা যাচ্ছে না। গ্রামটির বাসিন্দা বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় জানান, তাঁরা এমনিতেই অবহেলিত। পাকা রাস্তা হবে ভেবে সবাই বেশ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু রাস্তাটি যে ভোগান্তির কারণ হবে, তা বুঝতে পারেননি। গ্রামের ছেলেমেয়েরা কাদা মাড়িয়ে স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। সড়কটি যেন প্রতিদিনের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত সোমবার বিমলের এক স্বজনের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। বরযাত্রীদের কয়েকজন ওই সড়কে আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ফলে জামাকাপড় একেবারে কাদায় মাখামাখি হয়ে যায়। হাঁটুতে বেশ আঘাত পান একজন। এ নিয়ে বিয়েবাড়িতে হুলুস্থুল কাণ্ড। আক্ষেপ নিয়ে বিমল বলেন, ‘পূর্বপাড়ার পরে খানিকটা জায়গা খুঁইড়ে রাইখিছে। ওইটুকুর নাকি টেন্ডারই হয়নি। এখন দেখেন তো দাদা, গাঁয়ের কৃষকদের কী সমস্যা। এলাকার লোকজন ধান বিক্রি করতে যাইতে পারছে না।’

রাস্তাটি নিয়ে নিজের ভোগান্তির কথা জানান ভ্যানচালক বিল্টু (৪৫)। তিনি বলেন, দুজন পেছন থেকে না ঠেললে তিনি ভ্যান নিয়ে রাস্তা পার হতে পারেন না। গতকাল বিকেলে অনেকক্ষণ রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন সরকার ও মাসুম আলীকে পান তিনি। তাঁরা দুজন ঠেলে দেওয়ার পর বিল্টু কাদা থেকে ভ্যানটি টেনে তোলেন। এই ভ্যান ঠেলতে গিয়ে নয়নের ছাতাটি হঠাৎ কাদার মধ্যে পড়ে যায়। খেপে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মুন বুইলসে যে বুলি, এই তোর পাকা রাস্তা তুই তুইলি লিয়্যা যা।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের প্রকৌশলী মুনসুর রহমান বলেন, এ এলাকার মাটিতে এক ফোঁটা বৃষ্টি হলেই দুই ফোঁটা বেঁধে থাকে। কাদায় কোনো কাজ করা যায় না। এ জন্য ঠিকাদার কাজ শুরু করে আর এগোতে পারছেন না। এলাকাবাসীর আগ্রহের কারণেই আগেভাগে কাজ শুরু হয়েছিল। নইলে বর্ষার পরই তাঁরা কাজ শুরু করতেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার কাজ শুরু করা হবে।