[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাজশাহীতে বৃত্তির ফল জালিয়াতি, ১০ বছর পর বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি রাজশাহী

রাখী চক্রবর্তী | ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

রাজশাহীতে ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে করা বিভাগীয় মামলায় বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

২ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা থেকে এ আদেশ জারি করা হয়। এতে সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষর করেছেন। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পৃথক মামলা চলছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ আদেশ পৌঁছেছে।

আদেশে বলা হয়েছে, রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে রুজু করা বিভাগীয় মামলায় করা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ (৩) (গ) মোতাবেক ‘চাকরি হতে অপসারণ’ নামীয় গুরুদণ্ড দেওয়া হলো। একই সঙ্গে তাঁর সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হলো।

এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও ৩ (ঘ) অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর বিভাগীয় মামলা করা হয়। এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাঁকে এ গুরুদণ্ড দেওয়া হয়।

বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নম্বর ফর্দ এবং সমাপনী পরীক্ষার গোপনীয় কাগজপত্র ও কম্পিউটার তৎকালীন বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীর কক্ষে তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল। নম্বর টেম্পারিংয়ের কাজটি তৃতীয় কারও পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন বলেন, তাঁর (রাখী চক্রবর্তী) নামে দুদকের পৃথক মামলা আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয়ে রাখী চক্রবর্তীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখন কথা বলতে ইচ্ছুক নই।’

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বোয়ালিয়া থানার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪০ জন শিক্ষার্থীর খাতায় প্রাপ্ত নম্বরের চেয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কম্পিউটারে ফলাফল প্রস্তুত করে বেশি নম্বর দেওয়া হয়। এ নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর জুলাইয়ে রাজশাহীতে এসে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম তদন্ত করেন। ১৭ জুলাই মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে বিভাগীয় মামলা হয়। তাঁদের মধ্যে তৎকালীন বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হলো। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) আবুল কাশেমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। পরে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে চাকরি ফিরে পেলেও পরীক্ষা–সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলছে। আর কর্মচারী সোনিয়া রওশনকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দুদকের মামলার অভিযোগপত্র থেকেও তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

এরপর সংশোধিত ফলাফল প্রকাশের জন্য রাজশাহীতে অভিভাবকেরা সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল সংশোধিত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, আগে বৃত্তি পেয়েছিল এমন ৪০ জন শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল করা হয়েছে। যাদের ৩০ জন ট্যালেন্টপুল ও ১০ জন সাধারণ গ্রেডের বৃত্তি পেয়েছিল। বাতিলের তালিকায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমের মেয়েও ট্যালেন্টপুলে পাওয়া বৃত্তিও ছিল।

সংশোধিত ফলাফলে বলা হয়, নগরের শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল, যার সব কটি বাতিল করা হয়। বেসরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সন্তান পড়ত। বৃত্তি বাবদ তোলা টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দিতে বলা হয়।

সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা কোমলমতি শিশুদের বৃত্তি জালিয়াতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। ফলাফল সংশোধনের পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছিলাম। দীর্ঘদিন পরে হলেও সেই শাস্তি হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ আর এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস পাবেন না।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন