নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

টাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে দেশের কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও এই সংকট কাটানো যাচ্ছে না। ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ মিলছে না। ব্যাংক কর্মকর্তাদের অসহযোগিতামূলক আচরণ এবং নানা অজুহাতে টাকা দিতে দেরি করার অভিযোগও রয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে সংকটে থাকা কিছু ব্যাংকের শাখা ঘুরে দেখা গেছে, গ্রাহকদের জমানো টাকা চাইলেও দেওয়া হচ্ছে না। কোনো কোনো শাখায় সামান্য অর্থ তদবিরের মাধ্যমে মিললেও তা একবারের বেশি নয়। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ, বাকবিতণ্ডা, এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতে আমানত উত্তোলনের প্রবণতা বেড়ে যায়। সেই ধাক্কা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। ব্যাংকগুলো নগদ টাকার তীব্র সংকটে ভুগছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে সমস্যা বেশি।

এর আগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহকদের উদ্দেশে আহ্বান জানায় যেন তারা প্রয়োজন ছাড়া টাকা না তোলেন। তবু তারল্য ঘাটতি কাটেনি।

টাকা না পেয়ে বহু পরিবার দৈনন্দিন খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। সন্তানের বেতন, চিকিৎসা, ব্যবসার খরচ—সবই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। রাজধানীর মতিঝিল, মৌচাক, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সেবা নিতে এসে হতাশ হয়ে ফিরছেন গ্রাহকরা।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এক গ্রাহক কবিরুল ইসলাম জানান, ২০০১ সাল থেকে তিনি ব্যাংকটির সেবা নিচ্ছেন। এখন সপ্তাহে পাঁচ হাজার টাকাও মিলছে না। একাধিকবার কর্মকর্তাদের ‘আসছি’ বলে উধাও হওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে তার।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এক গ্রাহক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বলেন, পেনশনের টাকা জমা রেখেছেন। তার সামান্য অংশ তুলতেই সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেলেও টাকা পাননি।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ফকিরাপুল শাখার সামনে সাইফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, 'বাবার অসুস্থতার চিকিৎসা এবং নিজের সেমিস্টার ফি মেটাতে দুই লাখ টাকা তুলতে গিয়েও মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে।'

মৌচাকের পদ্মা ব্যাংকে এসেছিলেন ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান সৈকত। তিনি ৫০ হাজার টাকা তুলতে এসে পেয়েছেন মাত্র পাঁচ হাজার। বলেন, 'ব্যবসার কর্মীদের মজুরি দিতেও পারছি না।' 

ঢাকার বাইরেও একই সংকট। বান্দুরা শাখায় ন্যাশনাল ব্যাংকের এক গ্রাহক সুফিয়া বেগম বলেন, '১৫ লাখ টাকা জমা রেখেছেন, তুলতে গেলে বলা হচ্ছে পাঁচ বা দশ হাজার করে নিতে।' 

ফার্স্ট সিকিউরিটির মিরপুর শাখায় সোহেল রানা জানান, 'তার ১২ লাখ টাকা থেকে খুব কষ্টে ধাপে ধাপে এক লাখ টাকা তুলতে পেরেছেন।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ব্যাংকে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৭৪ শতাংশ বেশি। তবে শুধু মে মাসেই ১৬টি ব্যাংকে আমানত কমেছে।

এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ সহায়তা দিলেও দুর্বল ব্যাংকগুলোর অবস্থা এখনো ভালো নয়।'

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, 'ইসলামী ধারার কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। তবে দ্রুতই এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।'

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত শনিবার বলেন, 'ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থ গায়েব হয়ে গেছে। এর পুনর্গঠনে দরকার ৩৫ বিলিয়ন ডলার। নিয়ম ভেঙে প্রক্রিয়াও ধ্বংস হয়েছে।'