প্রতিনিধি পাবনা

পাবনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তির পর ছাদ খোলা গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন শরিফুল ইসলাম তুহিন। তার সঙ্গে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেছুর রহমান বাবলু ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

২২ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম তুহিন।

সোমবার সকাল ১১টার দিকে তিনি পাবনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। তাঁর মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়লে কারাগারের সামনে জড়ো হন বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী। তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। পরে সেখানে আনন্দমিছিল বের হয়।

এরপর গাড়িবহর নিয়ে তুহিনকে নিয়ে যাওয়া হয় পাবনা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে। সেখানে দলীয়ভাবে তাঁকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব এবং কারামুক্ত শরিফুল ইসলাম তুহিন।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু, সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার, যুগ্ম আহ্বায়ক আনিছুল হক বাবু, নূর মাসুম বগা, সাবেক সদস্যসচিব সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক, ডা. আহমেদ মোস্তফা নোমান ও সাবেক পৌর মেয়র মোকলেছুর রহমান বাবলু।

পরে তুহিনকে বহনকারী গাড়িবহর ঈশ্বরদীর উদ্দেশে রওনা হয়। পথে পথে দলীয় কর্মীরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। ঈশ্বরদীর পুরাতন মোটরস্ট্যান্ড এলাকায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, 'বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জন করে ক্ষমতায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ আজ দলের নাম ভাঙিয়ে যারা অপকর্মে করছে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, এরাই বিএনপির পেটের মধ্যে থেকে অপবাদ ছড়াচ্ছে।' 

যুবদল নেতার কারামুক্তির গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হাবিবুর রহমান হাবিব | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

তিনি আরও বলেন, ‘তুহিনের মুক্তির মধ্য দিয়ে ঈশ্বরদীতে বিএনপি আরও সুসংগঠিত হলো। বিএনপিকে নিয়ে কেউ খেলতে চাইলে, তাদের রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হবে।’ 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক পৌর মেয়র মোকলেছুর রহমান বাবলু। সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম শাহীন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন বিশ্বাস, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন ডাবলু, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রকি এবং উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ইমরুল কায়েস সুমন। 

মুক্তি পেয়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন শরিফুল ইসলাম তুহিন ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া 

শরিফুল ইসলাম তুহিন সংবর্ধনায় দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। দেরিতে হলেও মুক্তি পেয়েছি। এই মুহূর্তে আমি ঈশ্বরদীর জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সামনে দলের সঙ্গে থেকে জনগণের জন্য কাজ করাই হবে আমার লক্ষ্য।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম নয়ন।

২০০৩ সালের ৯ আগস্ট দাশুড়িয়ার ইউপি সদস্য আবদুল খালেক হত্যা মামলায় তুহিনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে র‍্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। কিছুদিন পর জামিনে মুক্ত হলেও ২০০৭ সালে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। এরপর টানা ১৮ বছর কারাগারে ছিলেন।

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ২৯ জন কয়েদির সাজা মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের মধ্যেই একজন ছিলেন শরিফুল ইসলাম তুহিন। কারা বিধি অনুযায়ী তাঁর সাজা হ্রাস পায়।

তাঁর মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঈশ্বরদী ও দাশুড়িয়া এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। সোমবার সকালে শতাধিক মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে বিএনপি কর্মীরা পাবনায় এসে তাঁকে কারাগারের সামনে থেকে গ্রহণ করেন। রাস্তাঘাটে বহু মানুষ ভিড় করেন একনজর দেখার জন্য।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তুহিন নিজ বাড়ি দাশুড়িয়ায় ফিরে যান এবং প্রয়াত মায়ের কবর জিয়ারত করেন।