প্রতিনিধি টেকনাফ

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জেটিঘাটে পড়ে আছে ট্রলার  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল সাগর। সাত দিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে কোনো পণ্য নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থায় নিত্যপণ্যের সংকট তীব্র হয়েছে টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। দ্বীপটিতে কয়েক গুণ বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, শাকসবজিসহ খাদ্যসামগ্রীর দাম। এতে দুর্ভোগে দিন কাটছে বাসিন্দাদের।

বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্ট মার্টিনে প্রায় ১১ হাজার মানুষ বসবাস করে। দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্য টেকনাফ থেকে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৫ মে সেন্ট মার্টিনে পণ্যভর্তি নৌযান গেছে। ওই দিন বিকেলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসন সেন্ট মার্টিন নৌপথে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যায়নি।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ছৈয়দ আলম আজ সকালে মুঠোফোনে বলেন, দ্বীপের অধিকাংশ দোকানে নিত্যপণ্যের সংকট রয়েছে। কয়েকটি দোকানে কিছু চাল, আটা–ময়দা, ভোজ্যতেল, জ্বালানি (গ্যাস সিলিন্ডার) থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। তিনি বলেন, ‘বাজারের উত্তর পাশে কয়েকটি দোকানে গত শুক্রবারও একটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৮–২০ টাকায়, সেই ডিম টেকনাফে বিক্রি হয় মাত্র ১০ টাকা। ১ কেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি করা হলেও টেকনাফে দাম ৩০ টাকা। সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। শুক্রবার পর্যন্ত ভোগ্যপণ্য ও শাকসবজির সরবরাহ মোটামুটি ছিল, আজ বাজারে প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই মিলছে না।’

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মুদিদোকানি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় তাঁর দোকানে সব ধরনের পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। কেবল পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে। মো. হোসেন নামের আরেক দোকানি বলেন, ‘কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়েক লাখ টাকার সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম ও চাল নিয়ে এসে মজুত করেছিলাম। সেই মালামাল প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে। নৌযান চলাচল দ্রুত স্বাভাবিক না হলে দ্বীপের মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে।’

বাজারের উত্তর পাশে কয়েকটি দোকানে গত শুক্রবারও একটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৮–২০ টাকায়, সেই ডিম টেকনাফে বিক্রি হয় মাত্র ১০ টাকা। ১ কেজি আলু ৫০ টাকায় বিক্রি করা হলেও টেকনাফে দাম ৩০ টাকা। সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

— মো. ছৈয়দ আলম, সদস্য, সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলামও খাদ্যের সংকটের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

আজ সকালে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, খালে প্রায় তিন শতাধিক ছোট–বড় নৌযান নোঙর করে রাখা হয়েছে। ঘাটে মানুষের পরিচিত ভিড় নেই। কিছু ব্যক্তিকে নৌযান পাহারা দিতে দেখা যায়। টেকনাফ–সেন্ট মার্টিন নৌপথের সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, নৌপথটিতে ৩০টি ট্রলার যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সব নৌযান বন্ধ রয়েছে। এতে নৌযানের মাঝিমাল্লাদের কর্মহীন দিন কাটছে।

সেন্ট মার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য ও বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ খান বলেন, দ্বীপে এখন পর্যটক না থাকায় বাসিন্দারা এমনিতেই সংকটে রয়েছেন। এর মধ্যে বৈরী আবহাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিতে আরও সংকটে পড়েছেন। দ্বীপের বাসিন্দাদের অনেকটাই ঘরবন্দী সময় কাটছে।

পণ্য নেই, পর্যটক না থাকায় বেচাকেনাও কম, তাই বন্ধ রাখা হয়েছে বাজারের অধিকাংশ দোকান। আজ সকালে সেন্ট মার্টিন জেটিঘাট সংলগ্ন বাজারে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

উপজেলা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল হাবিব ভূঁইয়া বলেন, ১৫ দিন আগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য বরাদ্দ ভিজিডি, ভিজিএফসহ খাদ্যসহায়তার চাল এসেছে। জেলা প্রশাসনের নিজস্ব তহবিল থেকে দ্বীপের জন্য বরাদ্দ হওয়া ১০ মেট্রিক টন চাল টেকনাফে নৌঘাটে এনে রাখা হয়েছে। ফলে চালের সংকট হবে না।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়ানোর জন্যই নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। খাদ্যের সংকট নিরসনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাঠানো যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে।