নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ লিমিটেডের গ্রাহকদের টাকা ও তথ্যের নিরাপত্তা এখন ঝুঁকিতে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও উল্লেখ করেছে যে ‘নগদ’-এর ব্যাংক হিসাবগুলোর স্বাক্ষরদাতা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে এবং প্রতিষ্ঠানটির ফরেনসিক অডিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা কেপিএমজি সম্পন্ন করছিল।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ‘নগদ’ নিয়ে গভর্নরকে একটি আধা সরকারি চিঠি দেন এবং তা নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন। এর জবাবে রোববার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই বক্তব্যে ‘নগদ’-এর প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা এবং বিভিন্ন অনিয়মের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গত ৭ মে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক নিয়োগের আদেশের ওপর ‘স্টে’ আদেশ জারি করেন। এর ফলে ‘নগদ’-এ নিযুক্ত প্রশাসক ও তাঁর দল তাদের কাজ করতে পারছেন না। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক দায়ের করা মামলার আসামি ও ‘নগদ’ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক নিজেকে ‘নগদ’ লিমিটেডের বৈধ ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করে ই-মেইলের মাধ্যমে একই মামলার আরেক আসামি শাফায়েত আলমকে ‘নগদ’ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে এই নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদের কোনো অনুমোদন ছিল না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রশাসক দলের ই-মেইল আইডি এবং ই-মানি ইস্যু–সংক্রান্ত কার্যক্রম তদারকির জন্য নেওয়া ‘নগদ’-এর বিভিন্ন আইটি সিস্টেমের আইডি ও পাসওয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ১২ মে থেকে ‘নগদ’-এর কার্যক্রমে প্রশাসক দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক দায়ের করা মামলার দুজন গুরুত্বপূর্ণ আসামিকে ‘নগদ’-এর ই-মানি–সংক্রান্ত ফাইন্যান্স ও আইটি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো হয়েছে। এতে ‘নগদ’ গ্রাহকদের অর্থ ও ডেটার সুরক্ষা বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিতে পড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানিয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংকে ‘নগদ’-এর ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট (টিসিএস) হিসাবগুলোর স্বাক্ষরদাতা (সিগনেটরি) পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘নগদ’-এর একটি পূর্ণাঙ্গ ফরেনসিক অডিট সম্পন্ন করার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অডিট ফার্ম কেপিএমজিকে নিয়োগ দিলেও সেই ফার্মকে নিরীক্ষা কার্যক্রমে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নগদ’ প্রকৃত টাকা জমা ছাড়াই অতিরিক্ত অন্তত ৬৪৫ কোটি টাকা ই-মানি ইস্যু করেছে। এর ফলে ডাক বিভাগ তথা সরকারের ৬৪৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ অনুযায়ী বাংলাদেশে রাষ্ট্রের পক্ষে টাকা ইস্যু করার একমাত্র ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত। আলোচ্য অতিরিক্ত ই-মানি সৃষ্টিকে বাজারে অবৈধ নতুন টাকা বিতরণের শামিল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে।
এ ছাড়া ৪১টি অননুমোদিত পরিবেশকের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা ‘নগদ’ থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে, যা মূলত সরকারি বিভিন্ন ভাতার অর্থ হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। অতিরিক্ত ই-মানি ইস্যু করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গত ৩ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল থানায় মামলা করেছে। এ ছাড়া ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ১৮ হাজার ২৩৩ জন ভোক্তার হিসাবে অবৈধভাবে অর্থ প্রেরণের ফলে ‘নগদ’ এমএফএস-এর ১৪৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।