নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

সরকারি সেবা পেতে গিয়ে গত এক বছরে দেশের ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক ঘুষ কিংবা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এই তালিকায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পাসপোর্ট অফিস ও ভূমি অফিসে বেশি দুর্নীতি হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিসিএস মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানানো হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী-পুরুষ এই জরিপে অংশ নেন।
জরিপ অনুযায়ী, সরকারি সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষদের ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং নারীদের ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিচারে বিআরটিএর ঘুষের হার ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ভূমি অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।
নিরাপত্তাবোধে নারীর পিছিয়ে পড়া
জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরাকে নিরাপদ মনে করেন। তবে এতে লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য স্পষ্ট—পুরুষের মধ্যে এই হার ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ হলেও নারীদের মধ্যে তা ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা
শুধু ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তাঁরা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে মত দিতে পারেন। পুরুষদের মধ্যে এ হার ৩১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, আর নারীদের ক্ষেত্রে মাত্র ২৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্যসেবা পায় অর্ধেক মানুষ, মানে ঘাটতি
গত এক বছরে ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৮২ শতাংশ সেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯ শতাংশ ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য মনে করলেও চিকিৎসকের সময় দেওয়া, আচরণ ও সেবার মানে সন্তুষ্টির হার ছিল তুলনামূলক কম—৬৫ শতাংশের নিচে।
প্রাথমিক-মাধ্যমিকে সরকারি শিক্ষার প্রতি আস্থা
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ জানান, তাঁদের অন্তত একটি শিশু সরকারি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষার সন্তুষ্টি ছিল ৬৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, আর মাধ্যমিকে ৭১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এক-পঞ্চমাংশ মানুষ বৈষম্যের শিকার
১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নাগরিক গত এক বছরে কোনো না কোনো বৈষম্য বা হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে পরিবারে বৈষম্যের হার ৪৮ শতাংশ, গণপরিবহন ও উন্মুক্ত স্থানে ৩১ শতাংশ এবং কর্মস্থলে ২৫ শতাংশ। তবে ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ঘটনাগুলো রিপোর্ট করেছেন।
নীতিনির্ধারণে হবে সহায়ক
বিবিএস বলছে, সিপিএস ২০২৫-এর ফলাফল এসডিজি ১৬-এর মূল্যায়ন ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার ও প্রশাসনিক কাঠামোয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। জরিপ কার্যক্রম পরিচালনায় জাতিসংঘের ইউএনডিপি, ইউএনওডিসি ও ওএইচসিএইচআরের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পুরো প্রক্রিয়ায় নাগরিকের গোপনীয়তা ও মতামতের মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।