প্রতিনিধি মাদারীপুর

মাদারীপুরে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বিকেলে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

মাদারীপুরে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহকে (২৩) কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা–কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা চালিয়েছেন। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের ভুঁইয়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর হামলার শিকার মাসুম বিল্লাহ মাদারীপুর শহরের বাদামতলা এলাকার বাসিন্দা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তিনি মাদারীপুরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি এনসিপির ৩১ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তা প্রত্যাখান করেন জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ, আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহসহ অনেকেই। জেলা কমিটি হওয়ার তিন দিন পরই জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের সমন্বয়ে সদর উপজেলায় এনসিপি আরও একটি কমিটি গঠন করে।

পুলিশ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এনসিপির সদর উপজেলা সমন্বয় কমিটির আয়োজনে আজ বিকেলে শহরের ভুঁইয়া কমিউনিটি সেন্টারে এক কর্মিসভার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি ছিলেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ। কর্মিসভায় মাসুম বিল্লাহ যোগ দেওয়ার পরই জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী হাসিবুল্লাহর নেতৃত্বে এনসিপির সদস্য রাতুল হাওলাদার, আদিল মাহামুদ (টুটুল)সহ বেশ কয়েকজন অর্তকিতে তাঁর ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাসুম বিল্লাহকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা মাসুম বিল্লাহকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে পাঠান। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান কর্তব্যরত চিকিৎসক।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক স্বপন সরকার বলেন, মাসুম বিল্লাহর মাথায় ও কানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরেও মারধরের আঘাত আছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাসুম বিল্লাহকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এ সময় তিনি জানান, এনসিপির নেতা হাসিবুল্লাহর নেতৃত্বে রাতুল হাওলাদার, টুটুলসহ ৮ থেকে ১০ জন তাঁর ওপর হামলা করেছেন।

যদিও জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী হাসিবুল্লাহ এই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই হামলার সময় আমি ছিলাম না। তবু রাজনৈতিক কারণে আমাকে দায়ী করা হচ্ছে।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আকাশ মাতুব্বর। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে স্বজনপ্রীতি হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের অনেককেই স্থান পেয়েছেন। এর প্রতিবাদ করে আসছিলেন মাসুম। এরই জেরে ধরে আজ তাঁর ওপর হামলা হয়েছে।

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী নেয়ামতউল্লাহ বলেন, ‘জেলা এনসিপির কমিটিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ঢুকেছে। তাঁরা মূলত হত্যা ও খুনের উদ্দেশ্যে এজেন্ডা নিয়ে নামছে। ওরা আমাদের কাউকে বাঁচতে দেবে না। ওরা ছদ্মবেশে আমাদের এনসিপিতে যুক্ত হয়ে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এনসিপির কর্মিসভায় হট্টগোল হয়েছে। সেখানে মাসুম বিল্লাহর আহত হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে কী কারণে তাঁর ওপর এমন হামলা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের চারটি দল কাজ করছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের ধরতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে।