নিজস্ব প্রতিবেদক সুনামগঞ্জ
![]() |
সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি বাড়ছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে নদী ও হাওরের পানি বাড়ছে। গতকাল শনিবার রাতেও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে জেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে। জেলা শহরের পাশে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এ সময় জেলায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার নদ-নদী ও হাওরের পানি বাড়ছে। আগামী কয়েক দিনও একই ধরনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস আছে। সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ৪১০ মিলিমিটার। এই ঢলের পানি ভাটিতে নামলে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাউবোর তথ্যমতে, রোববার সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ছিল ৬ দশমিক ৮৭ মিটার, যা বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার নিচে। গতকাল একই সময়ে তা ছিল ৬ দশমিক ৭৮ মিটার। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৮ দশমিক ৮০ মিটার।
সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটা, পাটনাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি, রক্তি, বৌলাই ও খাসিয়ামারা নদীগুলোর পানি বাড়ছে। মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নামে, যা বন্যার সৃষ্টি করে। ঢলের পানি প্রথমেই প্রবেশ করে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চলে।
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জুয়েল আহমদ বলেন, উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা দিয়ে পাহাড়ি ঢল নামছে। পানি বাড়ছে। এভাবে পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে।
বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি হিসেবে তাহিরপুর উপজেলায় ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের তালিকা ও জরুরি যোগাযোগের নম্বর প্রচার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি ও ঢলের কারণে পানি বাড়ছে। তবে এখনো বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। আমাদের সব প্রস্তুতি আছে।’
জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, প্রতিটি উপজেলায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব উপজেলা সাধারণত আগে প্লাবিত হয়, সেগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতির বিবেচনায় কিছু শুকনা খাবার, ওষুধ, মোমবাতি ঘরে মজুত রাখতে হবে। গোলার ধান, কাপড়চোপড় যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রতিও সতর্ক থাকতে হবে।
পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, পানি বাড়ছে, তবে এখনো কোথাও বন্যা হয়নি। আরও দু-এক দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।