ধর্ম ডেস্ক
কোরবানির মাংস সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: এক ভাগ পরিবারের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-বন্ধুদের জন্য এবং এক ভাগ গরিব-দুস্থদের জন্য। কিন্তু একটি সাধারণ প্রশ্ন অনেকের মনে জাগে: কোরবানির মাংস কি মুসলমানদের বাইরে অন্য ধর্মাবলম্বী কাউকে দান করা বৈধ?
ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী কিছু শর্ত সাপেক্ষে কোরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়া যায়। প্রখ্যাত সৌদি আলেম শাইখ মুহাম্মদ ইবনে সালিহ আল-উসাইমিন (রহ.) বলেছেন, ‘যদি কোনো অমুসলিম মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত না থাকে, তবে তাকে কোরবানির মাংস দান করা বৈধ।’
তিনি এই মতামতের সমর্থনে কোরআনের একটি আয়াত উল্লেখ করেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে ধর্মের কারণে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের ঘর থেকে বিতাড়িত করেনি, তাদের সঙ্গে ন্যায় ও দয়ার সঙ্গে ব্যবহার করতে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। কিন্তু যারা ধর্মের কারণে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদের ঘর থেকে বিতাড়িত করেছে এবং বিতাড়নে সাহায্য করেছে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। যারা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তারা জালিম (অন্যায়কারী)।’ (সুরা মুমতাহিনা: ৮-৯)
যদি কোনো অমুসলিম মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত না থাকে, তবে তাকে কোরবানির মাংস দান করা বৈধ।
শাইখ মুহাম্মদ ইবনে সালিহ আল-উসাইমিন (রহ.), প্রখ্যাত সৌদি আলেমএই আয়াত থেকে স্পষ্ট, যে অমুসলিমরা মুসলিমদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এবং তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় জড়িত নয়, তাদের সঙ্গে দয়া ও ন্যায়ের ব্যবহার করা উৎসাহিত করা হয়। তাই তাদের কোরবানির মাংস দান করা শুধু বৈধই নয়, বরং এটি ইসলামের মানবিক চেতনার প্রকাশ।
শত্রুতায় জড়িত না হলে
শেখ ইবনে উসাইমিনের মতে, যে অমুসলিমরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত বা তাদের ক্ষতি করার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট, তাদের কোরবানির মাংস দেওয়া উচিত নয়। এই শর্তটি কোরআনের উপরোক্ত আয়াতের দ্বিতীয় অংশের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে শত্রুতাপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বাস্তব জীবনে, সাধারণ অমুসলিম প্রতিবেশী, সহকর্মী বা বন্ধু, যারা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে, তাদের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য নয়। তাদের মাংস দান করা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না।
যদি সম্ভব হয়, অমুসলিমদের কোরবানির ধর্মীয় ও মানবিক তাৎপর্য বোঝানোর চেষ্টা করুন। এটি তাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।
ব্যবহারিক পরামর্শ
কোরবানির মাংস বিতরণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সমাজে সংহতি, ভালোবাসা এবং মানবিকতা ছড়ানো। মাংস দানের মাধ্যমে গরিব-দুস্থদের সাহায্য করা হয় এবং আত্মীয়-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা হয়। অমুসলিমদের মাংস দেওয়ার মাধ্যমে এই উদ্দেশ্য আরও ব্যাপক হয়; কারণ, এটি ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে মানবতার বন্ধন তৈরি করতে পারে।
তবে কোরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ব্যবহারিক বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
১. নিয়তের বিশুদ্ধতা: মাংস দানের নিয়ত হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং মানুষের কল্যাণ। এটি কোনো প্রদর্শনী বা বাহ্যিক উদ্দেশ্যের জন্য হওয়া উচিত নয়।
২. সংস্কৃতির প্রতি সংবেদনশীলতা: অমুসলিমদের খাদ্যাভ্যাস বা সাংস্কৃতিক পছন্দ বিবেচনা করুন। কিছু অমুসলিম নিরামিষভোজী হতে পারেন বা নির্দিষ্ট ধরনের মাংস খেতে অনিচ্ছুক হতে পারেন। তাদের পছন্দের প্রতি শ্রদ্ধা দেখান।
৩. শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক: যাদের সঙ্গে আপনার শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যেমন প্রতিবেশী বা সহকর্মী, তাদের মাংস দান করলে সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
৪. ধর্মীয় তাৎপর্য বোঝানো: যদি সম্ভব হয়, অমুসলিমদের কোরবানির ধর্মীয় ও মানবিক তাৎপর্য বোঝানোর চেষ্টা করুন। এটি তাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।
কোরবানির মূল চেতনা হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন এবং সমাজে ভালোবাসা ও সংহতি ছড়ানো। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)
সূত্র: ইসলাম কিউএ ডট ইনফো