বিনোদন প্রতিবেদক ঢাকা

কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একটি ভিডিও গত শনিবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুলকালাম।

এ ঘটনায় প্রতিবাদে ফুঁসছে বিনোদন অঙ্গনও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক তারকারা ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ষকদের বিচার দাবি করছেন। প্রতিবাদ জানিয়েছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে অভিনেত্রী দাবি করেন, তিনি নিজেও এই দেশে নিরাপদ নন। এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানের পরেও তিনি আশাহত হচ্ছেন। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসের শুরুতেই বাঁধন প্রশ্ন তুলে লেখেন, ‘এই দেশে আমি কি নিরাপদ? উত্তরটা সহজ: না। মোটেও না।’ অভিনেত্রী লেখেন, ‘প্রতিদিন এই দেশের মেয়েরা, নারীরা নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি আর অবিচারের শিকার হচ্ছেন। এর পরিবর্তে আমরা কী করি? আমরা সহ্য করি, আমরা প্রতিরোধ করি না। আর কেউ কেউ বেঁচেও থাকে না। কেউ কেউ এই সহিংসতার বলি হয়ে প্রাণ হারান।’ কেউ প্রাণ হারালেই তখন বাকি সবার টনক নড়ে বলে জানান অভিনেত্রী। তখনই হঠাৎ সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। হ্যাশট্যাগ ছড়ায়। তারপর সবকিছু ফিকে হয়ে যায়। আবার আগের মতো চলতে থাকেন সবাই। এটাই দীর্ঘদিনের বাস্তবতা। এটা নতুন কিছু নয়।

এরপর নিজের প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘আমি কতবার কত ধরনের অনলাইন হুমকি পেয়েছি। ঘৃণা, গালিগালাজ, কুৎসা রটানো, হয়রানি—তাতে কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? না। কারণ, এই দেশে অনেকেই বিশ্বাস করে, আমি এসব প্রাপ্য। যতক্ষণ না আমি খুন হচ্ছি, ততক্ষণ তারা মনে করবে যে আমাকে হয়রানি করাটা ঠিক আছে।

আমাকে অপমান করা যাবে এবং চেষ্টা করবে চুপ করানোর জন্য।’ রাষ্ট্রের ওপর আর ভরসা নেই জানিয়ে বাঁধন বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারিনি। জুলাই বিপ্লবের পর আমি আশা রাখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভুল করেছিলাম। এই দুর্নীতিগ্রস্ত, পিতৃতান্ত্রিক দেশে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটাই সত্যি। এটাই বাস্তবতা। আর আমাদের সেই বাস্তবতাই মানতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

এক ফেসবুক পোস্টে ঘটনাটির জন্য ধিক্কার জানিয়েছেন মিথিলা। তিনি লিখেছেন, ‘ধিক্কার’। এরপর হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘ধর্ষকের শাস্তি চাই।’ মিথিলার দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন তাঁর অনুসারীরা। কেউ কেউ ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড চাইছেন। কেউ কেউ মন্তব্য করে বলছেন, প্রকাশ্যেই কার্যকর হোক এদের শাস্তি।

অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান লিখেছেন, ‘নারী কিংবা শিশু আপনার–আমার প্রত্যেকের ঘরেই আছে। অতীত-বর্তমান সব সময়ের সব ধর্ষণের বিচার হোক দ্রুতগতিতে। দয়া করে কোনো ধরনের “যদি-কিন্তু” বাদ দিয়ে আসুন ধর্ম-বর্ণ–দলমতনির্বিশেষে সবাই ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’

তমা মির্জা লিখেছেন, ‘মুরাদনগর, কুমিল্লা! বীভৎসতা! লজ্জা…’! অভিনেতা মিশা সওদাগর অপরাধীর ফাঁসির দাবি জানিয়ে লিখেছেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ শান্তিতে থাকুক। প্রতিটি নারী নিরাপদে থাকুক। প্রতিটি অন্যায়ের ন্যায়বিচার হোক। প্রতিটি ধর্ষকের ফাঁসি হোক। মুরাদনগরে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের তীব্র ঘৃণা এবং নিন্দা জানাচ্ছি। ধর্ষকের ফাঁসির দাবি করছি।’ 

নুসরাত ফারিয়া লিখেছেন, ‘স্টপ রেপ’। প্রার্থনা ফারদিন দীঘি লিখেছেন, ‘ধর্ষণকে না বলুন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। নীরবতাই সমর্থন। ধর্ষণ বন্ধ করুন।’ আরশ খান লিখেছেন, ‘কাপুরুষত্ব যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন তা কুপুরুষত্বে রূপ নেয়। জন্মপরিচয়হীন না হলে একজন নারীর সাথে এমন করা সম্ভব না। একবার জারজ সব সময় জারজই থাকে।’

মৌসুমী হামিদ প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘মানুষ আর মানুষ নেই। পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আর কোনো মানুষ থাকবে না। খুব শীঘ্রই।’ 

জিয়াউল রোশান লিখেছেন, ‘কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় ধর্ষকদের একটাই শাস্তি চাই। জনসম্মুখে ফাঁসি। তারা কোন দল করে, কোন ধর্মের সেটা জানা দরকার নাই, জানতেও চাই না। জাস্ট জনসম্মুখে ফাঁসি চাই। আর আপনারা যারা সমবেদনা জানিয়ে সেই ভিডিওটি শেয়ার করছেন, আবার কেউ কেউ ভিউ পাবার লোভে সেই ভিডিওটা আপলোড করছেন, আপনারাও সেই ধর্ষণকারীর মতোই অপরাধী। আপনারা ভিউখোর রাক্ষস। ফাজলামি ছেড়ে দেন আর অতিসত্ত্বর এই সব ডিলিট করেন।’ কণ্ঠশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী লিখেছেন, ‘বিবস্ত্র বাংলাদেশ’।