নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ | ছবি: সংগৃহীত |
রাজধানীর বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার পর এবার সেই ভাস্কর্য ঘিরে থাকা ম্যুরাল সংবলিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণের’সাতটি দেয়ালও গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, এলাকাটি উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তবে একই সঙ্গে সেখানে ‘গণমিনার’ নির্মাণের পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই ভাঙার কাজ শুরু হয়। ঘটনাটি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী এই স্থাপনা ভেঙে ফেলার ঘটনায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘একটি ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে।’
‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন করেছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর। এখানে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের নানা অধ্যায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল সাতটি দেয়ালচিত্রে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন, প্রথমে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর দীর্ঘদিন সেটি অব্যবহৃত পড়ে ছিল। এবার ভেঙে দেওয়া হলো বাকি অংশটুকুও।
![]() |
বিজয় সরণিতে দিনভর চলে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ ভাঙার কাজ | ছবি: সংগৃহীত |
এই ভাঙার মধ্যেই জানানো হয়েছে নতুন একটি উদ্যোগের কথা—বিজয় সরণিতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে নির্মিত হবে ‘গণমিনার’। ২০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ এই ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, গণমানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তোলার কর্মসূচি চালানো হচ্ছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের গণপ্রতিরোধে শহীদ হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের স্মরণেই নির্মাণ করা হবে গণমিনার।’ আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে মিনারটির একটি দৃশ্যমান কাঠামো দাঁড় করানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে।
নির্মাণ কমিটির আরেক সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনায় শুধু প্রাঙ্গণ নয়, পুরো বিজয় সরণি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে।’
এর আগে, ২৫ জুন ডিএনসিসির সপ্তম করপোরেশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’-এ জুলাই শহীদদের স্মরণে একটি নতুন ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে এবং জায়গাটি উন্মুক্ত স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা (ধারণা) তৈরি করা হয়েছে। ১০–১২ দিনের মধ্যেই বিস্তারিত জানানো হবে।’
তবে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দিয়ে নতুন মিনার নির্মাণ কতটা যৌক্তিক? তাঁদের ভাষায়, ‘ভবিষ্যতের শহীদদের স্মরণে মিনার গড়া অবশ্যই দরকার, তবে সেটি যেন অতীতের শহীদদের স্মৃতি মুছে না দেয়।’