নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

চিকিৎসক দেখাতে এসে এই ব্যক্তি জানতে পারেন চিকিৎসাসেবা বন্ধ। আজ রোববার, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ভাই রাশেদুল হাসানের চিকিৎসা করাতে গত বুধবার সিরাজগঞ্জ থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন মিজানুর রহমান। এসে দেখেন, হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় আজ রোববারও এখানে রাশেদুলের চিকিৎসা করানো যায়নি।

আজ হাসপাতালের সামনে মিজানুর বলেন, ‘চিকিৎসা না করিয়ে ফিরে গেলে আবার আসতে হবে। তবে এখন মনে হচ্ছে, আর কোনো উপায় নেই। সামনে ঈদ, আর অপেক্ষা করতে পারছি না। বাড়ি চলে যেতে হবে।’

চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের মারামারি-সংঘর্ষের জেরে আজ পঞ্চম দিনের মতো হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালে এমন অচলাবস্থা চলছে।

আজ সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের কেউ আসেননি। তবে রোগীরা ঠিকই এসেছেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। অনেকে কী করবেন বুঝতে না পেরে অপেক্ষা করছেন।

হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা কখন চালু হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ কারণর ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগী ও স্বজনেরা। অনেকেই সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অস্ত্রোপচারের জন্য যাঁরা অপেক্ষা করছেন, তাঁদের কষ্ট যেন আরও বেশি।

এদিকে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চিকিৎসার মাঝপথে থাকা রোগীদের অন্য কোনো হাসপাতাল থেকে বাকি চিকিৎসা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

আজ সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের কেউ আসেননি। তবে রোগীরা ঠিকই এসেছেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। অনেকে কী করবেন বুঝতে না পেরে অপেক্ষা করছেন।

প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্যরা জানান, সকাল সাতটার পর থেকে অনেক রোগী এসে ফিরে গেছেন। তাঁদের কেউ নতুন রোগী। কেউবা আগে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, এখন আবার চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন। আবার অনেকের অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল আজ।

মারামারি-সংঘর্ষের পর থেকে হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আজ রোববার, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

 হাসপাতালে কথা হয় আনসার সদস্য আইনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় সকাল ৮টার দিকে। মানুষ যাবে কোথায়? এর আগে কখনো এমন বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়নি। বেশির ভাগ রোগী দূরদূরান্ত থেকে আসছেন। তাঁরা জানেন না, এই হাসপাতাল বন্ধ আছে। অনেক রোগী তাঁদের কথা বিশ্বাস করতে চান না। তাঁরা ভেতরে গিয়ে স্বচক্ষে দেখতে চান। অনেক বুঝিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠাতে হয়।

২৫০ শয্যার বিশেষায়িত এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সেবা চালু অবস্থায় জরুরি ও সাধারণ বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০টি অস্ত্রোপচার করা হয় এখানে। আর বহির্বিভাগসহ প্রতিদিন এ হাসপাতাল থেকে তিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নেন। পাঁচ দিন ধরে সব সেবা বন্ধ আছে।

সংকট নিরসনে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। মন্ত্রণালয়ের একটি দল কাজ করছে। আমরাও সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। যাঁরা চিকিৎসার মাঝপথে আছেন, তাঁদের কাছের কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

— জানে আলম, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক।

চাঁদপুরের মতলব থেকে ৭০ বছর বয়সী মায়ের চোখের চিকিৎসা করাতে এসেছেন অমল বিশ্বাস। আসার পর দেখতে পান, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ।

অমল বিশ্বাস বলেন, ‘গত রোববার মায়ের চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছে। আজ আবার চিকিৎসক দেখানোর কথা ছিল। মায়ের শরীর অত ভালো নয়। অনেক দূর থেকে এসেছি। এখন শরীর আরও খারাপ হবে।’

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, বর্তমানে এখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগী আছেন ৬০ থেকে ৭০ জন। আর কিছু সাধারণ রোগী এখনো হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসা মাঝপথে থাকায় তাঁরা কোথাও যেতে পারছেন না। তাঁদের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০।

মারামারি-সংঘর্ষের পর থেকে হাসপাতালটিতে নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে আনসার ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবারের পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা কেউ আসছেন না।

টানা পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। আজ রোববার, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অচলাবস্থা নিরসনে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর কথা বলেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। প্রতিনিধিরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্য সেবাদানকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলেই চিকিৎসাসেবা আবার শুরু করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্তর্বর্তী বন্দোবস্ত হিসেবে রোগীদের কাছের কোনো হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চলমান সংকটের বিষয়ে হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, ‘সংকট নিরসনে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। মন্ত্রণালয়ের একটি দল কাজ করছে। আমরাও সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। যাঁরা চিকিৎসার মাঝপথে আছেন, তাঁদের কাছের কোনো হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।’