প্রতিনিধি রাজশাহী

আবদুল জব্বার সরদার ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এক বছরের বেশি সময় সৌদি আরবের একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন আবদুল জব্বার সরদার (৪৫)। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার হিরানন্দপুর গ্রামে। স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এক অফিস থেকে আরেক অফিসে দৌড়াদৌড়ির পর সফল হন তাঁর স্ত্রী আদরি খাতুন। জব্বার এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। এক চোখ মেলে তাকিয়েছেন। চিকিৎসকেরা আশার কথা শুনিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁর পরিবারের সবাই অনেক খুশি।

হাসপাতালে কথা হয় আদরি খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী আবদুল জব্বার সরদার কৃষিকাজ করতেন। ধারদেনা করে সাত লাখ টাকা জোগাড় করে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি সৌদি আরব যান। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। বিদেশে গিয়ে তাঁর ভাগ্য ফেরেনি, বরং একের পর এক খারাপ ঘটনা ঘটেছে।

আদরি বেগম বলতে থাকেন, সৌদির বিমানবন্দরে নামতেই জব্বারকে ক্লিনারের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। বুঝতে পারেন, দালালেরা তাঁকে বিমানবন্দরে ‘ক্লিনার’ হিসেবে বেচে দিয়েছেন। তিন বছর পর শূন্য হাতে তাঁকে বিমানবন্দর থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়। পরে এলাকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি অন্য এক প্রতিষ্ঠানে কাজ পান। এই অবস্থায় গত বছরের ১০ মে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে।

এর পর থেকে আবদুল জব্বার সৌদি আরবের ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নানা সরকারি অফিসে ঘুরেছেন জানিয়ে আদরি খাতুন বলেন, ২৩ মে ভোরে অচেতন অবস্থায় দেশে ফেরেন তাঁর স্বামী। প্রথমে ঢাকায় একটি হাসপাতালে রেখেছিলেন। খরচ কুলাতে না পেরে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে আসেন। ২৬ মে তাঁকে এই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গতকাল শনিবার তাঁকে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছে। আইসিইউ থেকে বের করার সময় তিনি চোখ মেলে তাকান।

স্বামীর শারীরিক অবস্থার এটুকু উন্নতিতে অনেক খুশি স্ত্রী আদরি খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী আমার সব কথা বুঝতে পারছে। কথা কওয়ার লাগি মুখ লড়াইচ্ছে।’ বাবার মাথার পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে মেয়ে জলি আরা খাতুন বলছিলেন, ‘বাবা আমাক চিনতে পারচে। আমি কথা বুলছি, তখন মুখটা হাসির মতোন করল। কথা বুলার চেষ্টা করছে।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আবদুল জব্বার সরদার একেবারে কঙ্কাল হয়ে গেছেন। সৌদি আরবে এক বছর আইসিইউতে ছিলেন। তাঁর শরীরে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি দরকার। মাথায় একটা অস্ত্রোপচার লাগবে। তিনি আশা করছেন, এরপর জব্বারের জ্ঞান ফিরতে পারে। তাঁর গলার মধ্যে ‘ট্রাকিওটমি টিউব’ ঢোকানো আছে। সেটা সৌদি আরবেই আইসিইউতে ভর্তির পর ঢোকানো হয়েছে। পাইপটা আর কয়েক দিন পর বের করে নেওয়া হবে। তাহলে তিনি কথা বলতে পারবেন। এখন পাইপের কারণেই কথা বলতে পারছেন না।

প্রবাসী কর্মী বা তাঁর পরিবারের আবেদনের পরেপ্রেক্ষিতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরত আনার কার্যক্রম আছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের। জব্বারের স্ত্রী আদরি গত ১৩ জানুয়ারি বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেন। বোর্ডের রাজশাহী ওয়েলফেয়ার সেন্টারেও দিনের পর দিন যান।

এ বিষয়ে বোর্ডের সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ) মাইন উদ্দিন বলেন, ‘জব্বারের পরিবার গত জানুয়ারিতে আবেদন করে। পরে আমরা তাঁর দেশে ফেরানোর বিষয়ে দূতাবাসে চিঠি দিই। সবশেষ গত ৯ এপ্রিল দূতাবাসে একটি তাগিদপত্র দিয়েছি। পরে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়। এখন তাঁর পরিবার চিকিৎসা সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারে। জব্বার নিবন্ধিত শ্রমিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দিতে পারব।’