নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

ঈদের সকালে রাজধানীতে বৃষ্টি বাধা হয়নি, নামাজ শেষে গরু-ছাগল জবাই, আর রান্না-খাওয়ায় উৎসবের আমেজে ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন মুসলমানরা।

রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত হয় শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আর বিচারপতিসহ সর্বস্তরের মানুষ সেখানে ঈদের নামাজের পর দেশবাসীর কল্যাণ কামনায় মোনাজাতে হাত তোলেন। পাড়া-মহল্লার বেশিরভাগ মসজিদে ঈদের নামজ হয় সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে।

আবহাওয়া অফিস বলেছিল, এবার ঈদের দিন বৃষ্টি হতে পারে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টির আভাস কিছুটা বেশি।

সকালে ঢাকার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও সকালে ঈদের নামাজের সময় বৃষ্টির বিড়ম্বনা পোহাতে হয়নি। বরং সকাল সাড়ে ৯টার পর রোদের দেখা মিলেছে। ঈদ জামাত শেষে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন পশু কোরবানির তোড়জোড়ে।

এবার ঢাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পশু জবাই করার জন্য আলাদা স্থান বেঁধে দেওয়া হয়নি। বরাবরের মতই নগরজুড়ে রাস্তা ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে।

সকালে বৃষ্টি না থাকায় পশু জবাই ও মাংস ব্যবস্থাপনার কাজ নির্বিঘ্নে সারা গেলেও বিকালের ভাগে বৃষ্টি হলে বর্জ্য অপসারণের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।

ঢাকায় এ বছর প্রায় সাত লাখ পশু কোরবানি হতে পারে, তাতে ৫০ হাজার টনের মত বর্জ্য তৈরি হবে। সেভাবেই দ্রুততম সময়ে অপসারণের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

এ কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় ২০ হাজার ২৬৭ পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ইতোমধ্যে তাদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

দ্রুত ও নির্ধারিত সময়ে বর্জ্য অপসারণে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ১৩ লাখ ৯০ হাজার প্লাস্টিক, পলিব্যাগ ও বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া হটলাইন চালু রাখা হবে যাতে নাগরিকরা বর্জ্য সংক্রান্ত তথ্য দিতে পারেন।

দক্ষিণ সিটির প্রশাসক শাহজাহান মিয়া বলেছেন, 'ঈদের দিন বিকাল থেকে আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করছি যে, আমাদের কমিটমেন্ট- ১২ ঘণ্টার ভেতরে আমরা কোরবানির ময়লা পরিষ্কার করব। আমাদের এই ময়লা পরিষ্কারের জন্য প্রায় ১০ হাজারের কর্মী আমরা প্রস্তুত রেখেছি। প্রস্তুত রয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি।' 

শাহজাহান বলেন, 'আমরা জনগণকে আহ্বান জানিয়েছি যে, তারা যাতে এক জায়গা কোরবানি দিতে পারেন; তাহলে আমাদের ময়লা কালেকশনে সুবিধা হয়। এছাড়া ইনডিভিজুয়ালি কেউ কোরবানি দিলে, সেই ময়লাও আমাদের কর্মীরা করতে প্রস্তুত থাকবে। ময়লা কালেকশনে আমাদের কোনো রকম দুর্বলতা থাকবে না।' 

বর্জ্য সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য ডিএসসিসির হটলাইনের নম্বর: ০১৭০৯-৯০০৮৮৮ ও ০২২২৩৩৮৬০১৪।

উত্তর সিটি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, 'ঈদে দিনের বর্জ্য দিনের মধ্যেই অপসারণ করে শহর পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। সংস্থার প্রায় ১০ হাজার কর্মী ঈদের ৩ দিন এ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।'

এবার ঈদে প্রায় ২০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হবে বরে ধারণা করছে ডিএনসিসি। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ২২৪টি ডাম্প ট্রাক, ৩৮১টি পিকআপ, ২৪টি পেলোডার নিয়োজিত থাকবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সাড়ে ১২ লাখ পলিব্যাগ, আড়াই হাজার বস্তা ব্লিচিং ও চার হাজার ক্যান স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে।

এবার ‘পরিবেশসম্মত’ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমিন বাজারে দুটি পরিখা খনন করার কথা জানিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন।

ঢাকা উত্তর সিটির কন্ট্রোল রুমের নম্বর: +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪, ১৬১০৬।

ঈদে কোরবানির পশুর বর্জ্য ‘পরিবেশসম্মতভাবে’ ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ও নাগরিকের সহযোগিতা চেয়েছে।

যত্রতত্র পশু জবাই, উচ্ছিষ্ট ফেলা ও বর্জ্য ফেলে রাখার কারণে পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জনদুর্ভোগ তৈরি হয়, যা প্রতিরোধে সকলের সচেতন অংশগ্রহণ চাওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সেখানে বলা হয়েছে, জবাইয়ের সময় ও পরবর্তী কার্যক্রমে যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষা (যেমন: গ্লাভস, মাস্ক, এপ্রন) নিশ্চিত করতে হবে।

পশুর রক্ত, গোবর ও অন্যান্য পরিত্যক্ত অংশ নির্ধারিত গর্তে ফেলে মাটি চাপা দিতে অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

জবাই করা পশুর উচ্ছিষ্ট, যেমন রক্ত, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, হাড়, শিং, গোবর যেন কোনো অবস্থাতেই খোলা জায়গায় না ফেলা হয়, বরং নির্ধারিত ডাস্টবিন বা স্থানে ফেলা হয়, সেই অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

এছাড়া কোরবানির মাংস বিতরণ বা বর্জ্য অপসারণে প্লাস্টিক নয়, পরিবেশবান্ধব (বায়োডিগ্রেডেবল) ব্যাগ বা পাত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করছে মন্ত্রণালয়।