নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

আহসান এইচ মনসুর

দুবাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মেয়ে মেহরিন সারা মনসুরের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে—এ কথা নিজেই স্বীকার করেছেন গভর্নর। তবে তাঁর দাবি, তিনি গভর্নর হওয়ার আগেই তাঁর মেয়ে ওই ফ্ল্যাটের মালিক হন। এই ক্রয়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত বা পেশাগত কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও জানান তিনি।

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত আহসান এইচ মনসুর বুধবার টেলিফোনে বলেন, ‘আমার মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক, বয়স ৪০, বিবাহিত এবং আমেরিকার নাগরিক। স্বামীর ব্যবসার কারণে দুবাইয়ে বসবাস করে। সে নিজে ফ্ল্যাট কিনতেই পারে। তার আর্থিক বিষয়ে আমি কেন জড়িত হব?’

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন সম্প্রতি ফেসবুকে এক পোস্টে অভিযোগ তোলেন, গভর্নর আহসান এইচ মনসুর তাঁর মেয়ের নামে দুবাইয়ে ৪৫ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। পোস্টটি পরে শেয়ার করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, যা ঘিরে আলোচনা শুরু হয়।

তবে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি গভর্নর হওয়ার অনেক আগেই, ২০২৩ সালে আমার মেয়ে ওই ফ্ল্যাট কিনেছে। ওই ফ্ল্যাটে সে আগেই থাকত। মালিক ছিলেন একজন ভারতীয় নাগরিক, যিনি পরে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে আমার মেয়ে সেটি কেনে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ২০২৩ সালেই শেষ হয়েছে, ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর হয়।’

তিনি আরও জানান, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের ৮০ শতাংশই মর্টগেজ নেওয়া, বাকি অংশ দিয়েছেন তাঁর মেয়ে নিজে। গভর্নরের ভাষায়, ‘গত তিন বছরে মেয়েকে একটি কাপড় ছাড়া আর কিছু দিইনি।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর ব্যাংক খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন। পরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নেন।

গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেন। প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইসলামী ধারার কয়েকটি ব্যাংকে দেওয়া 'অবৈধ' তারল্য সহায়তা বন্ধ করেন। এরপর ওইসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়, যার ফলে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই হ্রাস পায়।

এছাড়া এসব ব্যাংকের ফরেনসিক অডিটে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণও পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

বর্তমান সরকার পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরাতে জোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছেন গভর্নর আহসান মনসুর। ঠিক এই সময়ে তাঁর মেয়ের বিদেশে ফ্ল্যাট কেনার খবরে প্রশ্ন উঠেছে তাঁর ব্যক্তিগত স্বচ্ছতা নিয়েও।

তবে গভর্নর জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাঁর কোনো জড়িত থাকার প্রমাণ নেই এবং মেয়ের আর্থিক স্বাধীনতাকেই তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন।