প্রতিনিধি রাজশাহী
রাজশাহী মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে দলের একাংশের নেতাদের সংবাদ সম্মেলন। আজ রোববার বেলা ১১টায় নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহী মহানগর বিএনপির চিহ্নিত নেতারা বেআইনিভাবে প্রতিষ্ঠান জবরদখল, ভূমি-ভবন দখল, অযাচিত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাংশের নেতারা। রোববার সকালে নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রাজশাহীর’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেনের বিনিময়ে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী (ইশা), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা ও সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ রাজশাহীতে জুলাই বিপ্লবে হামলা, খুন এবং বিএনপি অফিস ও নেতা–কর্মীদের ওপর হামলায় জড়িত এজাহারভুক্ত বিভিন্ন আসামিকে আটক না করতে পুলিশ-প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তদবির করছেন। আবার মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের নেতৃত্বে অনেক অরাজনৈতিক নিরপরাধ ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন নগরের বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান (পিন্টু)। এতে নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ, বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদ রবিউল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, শাহ মখদুম থানার সাবেক সভাপতি মো. মাসুদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, রাজপাড়া থানার সাবেক সভাপতি শওকত আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, মতিহার থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনসার আলী ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খাজদার আলী, যুবদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল আমিন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে তোলা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ করব তাঁরা যেন নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দল, দেশ এবং জনগণের জন্য কাজ করেন। এ বিষয়ে এটাই আমার বক্তব্য।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে হাইব্রিডের বাম্পার ফলন হচ্ছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত দিনে যেসব আওয়ামী মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীর দ্বারা বিএনপির নেতা–কর্মীরা রাজশাহীতে হামলা–মামলা জুলুম–নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদেরই বর্তমান রাজশাহী মহানগর বিএনপির কিছু নেতা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন, শিষ্য বানাচ্ছেন।
বক্তব্যের সপক্ষে উদাহরণ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা সাইদুর রহমান বলেন, রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ অনেকে বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ, জাসদ, জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। মিজানুর ও আমিনুল আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন নির্বাচনে সরাসরি ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালানোসহ দলীয় ভূমিকা পালন করেছেন। আমিনুল ইসলাম রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি গুলিবর্ষণ করা সন্ত্রাসী রনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক। তাঁদের ইন্ধনে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবলুর বাসায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
গত ২২ জুলাই বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলমের বাসায় হামলাকারী যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বর্তমানে ভোল পরিবর্তন করে নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদের সঙ্গেই চলাফেরা করছেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘মহানগর বিএনপির একটি অনুপ্রবেশকারী সক্রিয় সন্ত্রাসী বলয়ের কারণে তিনটি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই সন্ত্রাসী বলয় নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদের সরাসরি নেতৃত্ব-আশ্রয়-প্রশয়ে বহাল তবিয়তে আছেন।’
রাজশাহী সড়ক পরিবহন সমিতি দখলের অভিযোগও আনা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুন ও বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান শরীফের নেতৃত্বে রাজশাহী সড়ক পরিবহন সমিতি ৯ আগস্ট বলপূর্বক দখল নেওয়া হয়। নজরুল হুদা মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিল অফিসের জায়গাটি অবৈধভাবে দখল করেছেন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি মামলাও হয়েছে।
বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি গঠনেও লেনদেন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, রাজপাড়া থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী ও মাহমুদুল হক অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁদের না জানিয়ে কমিটিতে রাখা হয়েছে এবং তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তাই কমিটি গঠনের পরপরই তাঁরা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন। ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে রাসেল হোসেন নামের এক যুবলীগ নেতাকে। ওই যুবলীগ নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও বিপুল অঙ্কের বিনিময়ে বিএনপিতে নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে নগর
বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, ‘সাবেক যুবদল নেতা আবুল কালাম আজাদ (সুইট)
তাঁর ব্যক্তিস্বার্থে ৫ আগস্টের পর মাউশির একজন কর্মকর্তাকে চেয়ার থেকে
টেনে বের করে দেন। এ কারণে তাঁকে বহিষ্কার করেছিলাম। পরে সাবেক একজন
ছাত্রনেতা হিসেবে বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করি। কিন্তু এর পর থেকে তিনি
আবার খেয়ালখুশিমতো যা খুশি করছেন। কখনো বিক্ষোভ করছেন, কখনো সংবাদ সম্মেলন
করছেন। সবই মিথ্যা অভিযোগ।’