প্রতিনিধি মাগুরা
![]() |
নারী নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, সাইবার বুলিং ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া বাকি তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায় ঘোষণা করেন।
অভিযোগ গঠন বা বিচার শুরুর ২৫ দিনের মাথায় আলোচিত এই মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হলো। চলুন দেখে আসি, ঘটনার পর থেকে আজ রায় ঘোষণা পর্যন্ত কোন দিন কী ঘটেছে।
১ মার্চ ২০২৫, শনিবার
শিশুটি শ্রীপুর উপজেলার বাবার বাড়ি থেকে মাগুরা পৌর এলাকায় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসে। এর আনুমানিক চার মাস আগে ওই বোনের বিয়ে হয়।
৬ মার্চ, বৃহস্পতিবার
সকাল আনুমানিক ৮টা ২০ মিনিট থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে বোনের শয়নকক্ষে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ওই দিন রাতেই শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়। সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ওই দিনই শিশুটির বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী ও ভাশুরকে আটক করে পুলিশ।
৭ মার্চ, শুক্রবার
গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। জুমার নামাজের পর এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে বিচারের দাবিতে মাগুরা সদর থানা ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়।
৮ মার্চ, শনিবার
অচেতন শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
৯ মার্চ, রোববার
সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তাশঙ্কা থাকায় দিনে আসামিদের আদালতে আনতে পারেনি পুলিশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই দিন গভীর রাতে রিমান্ড শুনানি হয়। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে মূল অভিযুক্ত ভুক্তভোগী শিশুর বোনের শ্বশুরকে সাত দিন; স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
![]() |
ধর্ষণ ও নারী–শিশু নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার
ওই দিন সকালবেলা দুই দফায় শিশুটির ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তাঁর হৃৎস্পন্দন ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টায় তাঁর আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এ দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন ফেরেনি। বেলা একটায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সন্ধ্যায় সামরিক হেলিকপ্টারে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় আনা হয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে জানাজা শেষে শিশুটির মরদেহ গ্রামের বাড়ি শ্রীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে গ্রামের গোরস্তানে রাত ১০টার দিকে মরদেহ দাফন করা হয়।
সন্ধ্যায় শিশুটির বোনের শ্বশুরবাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এর আগে সেখানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
১৫ মার্চ, শনিবার
মাগুরার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে ওই ব্যক্তি বলেন, ৬ মার্চ সকালে ছোট ছেলের কক্ষে (শিশুটির বোনের স্বামীর কক্ষে) শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
১৩ এপ্রিল, রোববার
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন মাগুরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
১৭ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার
মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
২০ এপ্রিল, রোববার
অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত।
![]() |
আসামিদের কড়া নিরাপত্তায় আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হয়। মাগুরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
২৩ এপ্রিল, বুধবার
আদালতে চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়।
২৭-৩০ এপ্রিল
২৭ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। প্রথম চার দিনে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
৭ মে, বুধবার
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। শুনানিতে ৮ দিনে মোট ২৯ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
৮ মে, বৃহস্পতিবার
আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের শনাক্ত করা ও তাঁদের বক্তব্য শোনেন।
১২ মে, সোমবার
যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু। অংশ নেন রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
১৩ মে, মঙ্গলবার
যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ। ১৭ মে রায় ঘোষণা হবে বলে জানান আদালত।
১৭ মে, শনিবার
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় আসামি হিটু শেখসহ চার আসামিকে আদালতে আনা হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান। এ সময় মামলার বাদী শিশুটির মা ও আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।