প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের কারণে চট্টগ্রামে রাতভর মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালেও বৃষ্টির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি ও গাড়ির পরিমাণ কম। জরুরি প্রয়োজনে এবং জীবিকার তাগিদে বের হওয়া মানুষ টানা বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
টানা ভারী বৃষ্টিতে প্রতিবছর চট্টগ্রাম নগরের নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তাঘাটও ডুবে যায়, পানি ঢোকে মানুষের বসতবাড়িতে। তবে বৃহস্পতিবার রাতের টানা বৃষ্টিতেও চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোতে পানি ওঠার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৬৭ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টির এ ধারা আরও দু-এক দিন থাকবে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে নগরের খাল ও নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও খননে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগে অধিকাংশ খাল ও নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হয়েছে। এ কারণে ভারী বর্ষণে পানি উঠছে না। তবে জলাবদ্ধতার শঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি তাঁরা।
চট্টগ্রাম নগরের ডিসি সড়ক, বাকলিয়া, চকবাজার, ফুলতলা, কে বি আমান আলী সড়ক, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, হালিশহর, আগ্রাবাদ, ওয়াসা মোড় এলাকায় বারবার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো। ভারী ও টানা বর্ষণে এসব এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি জমে থাকত। বৃষ্টি থামলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকত পানি। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হতো। তবে গভীর নিম্নচাপের কারণে গতকাল রাত থেকে টানা বৃষ্টি হলেও আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
ডিসি সড়ক এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমানের বাড়ি চাক্তাই খালের পাশে। নগরের পানিনিষ্কাশনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে এই চাক্তাই খাল। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় মিজানুর রহমানের বাড়ির সামনের সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতভর বৃষ্টি হলেও তাঁর এলাকায় পানি ওঠেনি বলে জানান তিনি। বলেন, এবার চাক্তাই খাল খনন করা হয়েছে। খালের ভেতর থাকা বাঁধও অপসারণ করা হয়েছে। খাল পরিষ্কারের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়নি। তাই জলাবদ্ধতা নেই।
নগরের আরেক জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা চকবাজারের বাসিন্দা আবদুল হামিদ। প্রতি বর্ষায় ভারী বর্ষণের সময় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তাঁর বসতঘর তলিয়ে যায়। তবে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তাঁর ঘরে পানি ঢোকেনি বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরে প্রথম পাঁচ মাসে এখন পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত আটটি সভা হয়েছে। এসব সভায় নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব কাজ শেষ করতে মে মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন, সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, সিডিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সেবা সংস্থাগুলো।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী শুক্রবার সকাল ৯টায় বলেন, নগরের যেসব জায়গায় সচরাচর পানি ওঠে, ওই সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোথাও পানি ওঠেনি। এবার তাঁরা পরিকল্পনা করে খাল ও নালা-নর্দমা খনন করেছেন। পানিপ্রবাহের পথ পরিষ্কার থাকায় পানি জমছে না। তবে কোনো কারণে এক টানা ভারী বৃষ্টি হলে হয়তো পানি জমতে পারে। তবে তা অল্প সময়ের মধ্যে নেমে যাবে।